গৌতম ব্রহ্ম: পরিবার ফিরিয়ে নেয়নি৷ হাত গুটিয়ে রেখেছিল দূতাবাসও৷ তাই চার বছরের বেশি সময় ধরে পিজি হাসপাতালই হয়ে উঠেছিল ঠিকানা৷ কপালে সেইটুকুও সইল না! দুর্গন্ধ ছড়ানোর অভিযোগে এবার সেই আশ্রয়টুকুও গেল৷ পিজি থেকে রাতারাতি সরতে হল বিদেশিদের৷ দূতাবাসের লোকজন এসে ১১ জনকে নিয়ে গেলেন৷ কেউ ইউরোপীয়, কেউ এশীয়, কেউ আবার স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের নাগরিক ছিলেন৷ দায়মুক্ত হয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল পিজি কর্তৃপক্ষও৷
এতদিন মর্গে সংরক্ষিত ছিল ৩৮টি দাবিহীন মরদেহ৷ এরমধ্যে ছিল ১২ জন বিদেশির দেহ৷ কয়েকজন বাংলাদেশি৷ বাকিরা অন্য মহাদেশের৷ ৩৮টি দেহের মধ্যে ২০টি প্রথম ধাপে, পরে বাকিগুলি পিজি থেকে সরানো হয়৷ আইন মেনে বিদেশিদের দেহগুলি তুলে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের হাতে৷ বাকি দেহগুলিও সৎকারের ব্যবস্থা হয়েছে৷ এমনটাই জানালেন পিজি হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা. বিশ্বনাথ কাহালি ও পিজির রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য বিধায়ক ডা. নির্মল মাজি৷
ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে একটি দুর্ঘটনা৷ সম্প্রতি ‘পুলিশ ট্রেনিং স্কুল’-এর সামনে বাইক দুর্ঘটনা ঘটে৷ মৃত্যু হয় কয়েকজনের৷ হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেই দেহগুলির ময়নাতদন্ত হচ্ছিল পিজির মর্গে৷ মৃতের আত্মীয়দের সমবেদনা জানাতে পিজিতে ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও শোভন চট্টোপাধায়৷ অরূপবাবু আবার পিজি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান৷ বাইরে অপেক্ষা করার সময়ই মর্গ থেকে বেরনো দুর্গন্ধ নাকে লাগে তাঁদের৷ দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে মন্ত্রীরা কথা বলেন ডা. বিশ্বনাথ কাহালির সঙ্গে৷ বিশ্বনাথবাবু তখন জানান, চার বছরের বেশি সময় ধরে ৩৮টি মরদেহ জমে রয়েছে মর্গে৷ দাবিহীন দেহগুলিই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে৷ দূষিত করছে মর্গের পরিবেশ৷
ডিসেম্বরের শেষে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়৷ দেহ ও দেহাংশগুলি সরানোর ব্যবস্থা হয়৷ সম্পূর্ণ করা হয় আইনি প্রক্রিয়া৷ দূতাবাসের হাতে দেহগুলি তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিজির অধিকর্তা ডা. মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তবে আইনি জটিলতায় একজন বিদেশির দেহ এখনও বন্দি হয়ে রয়েছে পিজির মর্গে৷ বিশ্বনাথবাবু জানিয়েছেন, ‘‘দাবিহীন বা অজ্ঞাতপরিচয় লাশ ১২ দিন মর্গে রেখে দেওয়ার নিয়ম৷ তারপর আইন মেনে তা সৎকার করা হয়৷ আমরা অনেক বেশিদিন ধরে দেহগুলি সংরক্ষিত রেখেছি৷ বিদেশিদের দেহগুলি তো চার বছরের বেশি সময় ধরে রেখেছি৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.