স্টাফ রিপোর্টার : বড় দুঃখে আছেন উৎপলবাবু। ছেলেকে নিয়ে বউ কেন যে গেল মনসার গান শুনতে! চার মাস পরেও আফসোস আর যাচ্ছে না তাঁর। ‘‘১৩ ভাদ্র বিকেলে মনসার গান শুনতে ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলাম। গান শেষ। ছেলে কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছে। বাড়ি ফিরে ছেলে কানে হাত দিয়ে ইশারা করে দেখাল যন্ত্র নেই। মানে ককলিয়া উধাও।’’ বলেছিলেন রাখি দেবী। পিজি হাসপাতাল (SSKM) থেকে যে যন্ত্রটা (Bionic Ear) কানে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হারিয়ে গেছে। ব্যস। প্রায় ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকার যন্ত্র বেবাক হাওয়া।
সেই ঘটনা জুন মাসের ৩০ তারিখের। প্রায় তিন ঘণ্টা কানের অস্ত্রোপচার করে মাথার ভিতরে বসানো হয়েছিল কৃত্রিম শ্রবণযন্ত্র। সব মিলিয়ে পাঁচদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। স্পিচ থেরাপি (Speech Therapy) করে বাবা-মা এমন কথা বলতে শুরু করে সাড়ে তিন বছরের ছেলেটা। কিন্তু সেই যন্ত্র হারানোর পর উৎপলবাবু ও তাঁর স্ত্রী ভেবেই নিয়েছিলেন তাঁদের একমাত্র ছেলের আর হয়তো এই জীবনে কথা বলা হয়ে উঠবে না। কিন্তু গোটা চিত্রটা আমূল বদলে গেল ১২ অক্টোবর বুধবার।
আগের দিন পিজি হাসপাতালের প্রবীণ ডাক্তারবাবু ফোন করে তাঁদের ডেকে পাঠান। রীতিমতো কড়া গলায় বলেন, ‘‘ঠিক একটার মধ্যে আসতে হবে।’’ সেই অনুযায়ী এদিন ছেলেকে নিয়ে দম্পতি হাজির। ভয়ে রীতিমতো জড়োসড়ো। প্রথমেই কান ফাটানো চিৎকার। ডা. অরুণাভ সেনগুপ্ত (Dr. Arunava Sengupta) এক ধমক দিলেন। ‘‘জানেন ওই যন্ত্রের দাম কত? প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। ভিতরে যে যন্ত্র তার দাম সাড়ে তিন লাখ। কোন আক্কেলে ওটা হারালেন?’’ পাল্টা উত্তর, ‘‘বড্ড ভুল হয়ে গেছে ডাক্তারবাবু। আরেকটা যন্ত্র যদি পাওয়া যায়, ছেলেটা ঠিক কথা বলতে পারবে।’’ এবার হো-হো করে হেসে উঠলেন প্রবীণ চিকিৎসক। ‘‘আরে যন্ত্র বসালে ছেলে যে কথা শুনতে পারবে সে তো জানি। কিন্তু সরকার তো একবারই টাকা দেয়। কিন্তু এখন কে দেবে? ইএনটির ডক্টরস’ রুমে পিন পতনের নীরবতা।
খড়্গপুরের (Kharagpur) সালুয়ার সাঁতরা দম্পতির সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল একবিঘে জমি বিক্রি করলে হয়তো লাখ খানেক টাকা মিলতে পারে। কিন্তু সাড়ে তিন লাখ অসম্ভব। গুম মেরে বসে রইলেন ডা. অরুণাভ সেনগুপ্ত। পরপর কয়েকটা ফোন। এবার উৎপলবাবুর দিকে ফিরে বললেন, ‘‘অমুকের কাছে চলে যান। দেখুন কী করে, বাকিটা আমরা দেখছি।’’ ছাপোষা উৎপল সাঁতরার ঠোঁট দুটো যেন কেঁপে উঠল। ঠিকানা নিয়ে পড়ি কি মড়ি দৌড়। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা। উৎপলবাবু বেশ ফুরফুরে মেজাজে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.