অভিরূপ দাস : গত সাত-আট বছর ধরে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতেন না। ভুলেছিলেন হাঁটাচলা। ঘরময় হামাগুড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিয়াত্তর বছরের মহিলা!
পেটের মধ্যে যে ওত পেতে ছিল প্রায় ত্রিশ কেজি ওজনের মাংসপিণ্ড! একটুকরো রুটি খেলেই পেট ভরে যেত। ডিম্বাশয়ে ছোটখাটো টিউমার বিরল নয়। কিন্তু এমন প্রকাণ্ড আকারের টিউমার শেষ কবে বেরিয়েছে মনে করতে পারছেন না চিকিৎসকরা। একবালপুরের কল্পনা থাপার ওই টিউমার ডিম্বাশয় থেকে শুরু হয়ে বাড়তে বাড়তে দখল নিয়েছিল সম্পূর্ণ পেটের। এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে বিঘ্নিত হচ্ছিল হার্টের কাজ। ফুসফুস হারিয়েছিল স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা। একবালপুরের কল্পনা থাপা দাঁড়িয়েছিলেন মৃত্যুর মুখোমুখি। তিয়াত্তর বছরের ওই মহিলাকে বাঁচাতে রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমেছিলেন এসএসকেএমের চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি হয় মজবুত টিম।
স্ত্রীরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষচন্দ্র বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে গোটা অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন স্ত্রীরোগ বিভাগের সার্জন ডা. চৈতালি দত্ত রায়। তিয়াত্তর বছর বয়সে পেট কেটে অত বড় টিউমারটা বের করা সহজ ছিল না। টিউমারটা যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য অঙ্গকে জড়িয়ে ধরেছিল, কেটে বের করতে হত সন্তর্পণে। পাঁচজন স্ত্রীরোগ বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিলে বৈঠক করেন, কোন পথে হবে অস্ত্রোপচার। সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচারে অ্যানাস্থেশিয়ার দায়িত্বে ছিলেন ডা. অর্পিতা লাহা, ডা. প্রসেনজিৎ। মেডিক্যাল টিমে ছিলেন বক্ষরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোমনাথ কুণ্ডু। কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের ডা. দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায়, নিউরো মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. অরিজিৎ রায়।
পেট কেটে সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচার করতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। ডা. চৈতালি দত্ত রায় জানিয়েছেন, গত সাত-আট বছর ধরেই একটু একটু করে ফুলছিল পেটটা। কল্পনা থাপা ভেবেছিলেন, ভুঁড়ি বাড়ছে। বুঝতে পারেনি, টিউমারটা ক্রমশ ডালপালা মেলছে। রোগীর বয়স এবং টিউমারের আকার প্রকাণ্ড হওয়ায় ঝুঁকিও ছিল অনেক। কিন্তু সেই অস্ত্রোপচারই নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করেছে এসএসকেএম হাসপাতাল। এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, অনেক রোগীর সচেতনতার অভাব রয়েছে। পেট ফুলে থাকে। রোগী ভাবেন, ভুঁড়ি হয়েছে। কিন্তু এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অবিলম্বে পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.