অভিরূপ দাস: রোজ খাবার খাচ্ছিলেন তবু ওজন কমে যাচ্ছিল। যেন পেটের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কেউ। সে-ই খেয়ে নিচ্ছে খাবারগুলো। ছ’মাসে প্রায় ১০ কেজি ওজন কমে গিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মাবিয়া বিবির। “নিশ্চয় পেটে কিছু ঢুকেছে।” নিদান দিয়েছিল গ্রামের হাতুড়ে। ‘কিছু’টা কি? হাসপাতালে শুয়ে মাবিয়া জানিয়েছেন, “সাপই ভেবেছিলাম। পেটটা কেমন ফুলে যেত। কী যেন একটা বাসা বেধেছিল পেটে।” তেমনটা জানিয়েছিলেন গ্রামের পিরবাবাও। অসুখ সাড়তে মানত করেছিলেন মাবিয়ার স্বামী।
যদিও গ্রামের পিরের জলপড়া, ঝাড়ফুঁকে কোনও কাজই হয়নি। দিনকে দিন শরীর আরও রুগ্ন হয়ে যাচ্ছিল। প্রাণ বাঁচাতে এসএসকেম-এ দৌড়ে আসেন মথুরাপুরের মাবিয়া বিবি (৪৬)। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা পরে পেটের মধ্যেকার পেল্লায় এক ‘লাম্প’ বা মাংস পিণ্ড। একদম উপরের যকৃৎ থেকে নিচের পেলভিস পর্যন্ত পাকিয়ে পাকিয়ে উঠেছে সেই মাংসপিণ্ড। আঁকড়ে রয়েছে কিডনির অনেকটা অংশও। তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। সার্জারির প্রফেসর অভিমন্যু বসু, পার্থসারথি ঘোষ সেই অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন। পেট কেটে সাপের মতো মাংস পিণ্ডটা বেরোল সোমবার দুপুরে। হুবহু সাপের মতোই দেখতে। স্ত্রীর পেটের মধ্যে এতবড় জিনিসটা ছিল ভাবতে পারছেন না মাবিয়ার স্বামীও। এসএসকেএম-এর অপারেশন থিয়েটারে লম্বা সেই মাংস পিণ্ডটা ধরতে জনা তিনেক চিকিৎসক লাগল। “১২ কেজি ওজন। ভাবতে পারছেন!” বিস্ফারিত চোখে জানিয়েছেন অপারেশন টিমের অভিমন্যুবাবু।
সমস্ত জায়গা অক্ষত রেখে মাংস পিণ্ডটা বের করা গেলেও বাদ দিতে হয়েছে কিডনিটা। তবে তাতেও সুস্থ হয়ে বাঁচতে বিশেষ অসুবিধা হবে না রোগীর। অভিমন্যুবাবু আরও জানিয়েছেন, “চিকিৎসার পরিভাষার এই মাংস পিণ্ডের নাম ‘রেট্রোপেরিটোনিয়াল মাস’। ডানদিকের কিডনি, কোলন, যকৃৎ, ডিওডিনামকে জড়িয়ে ছিল এই মাংসপিণ্ডটা। ’’ এত বড় মাংসপিণ্ড খুব একটা দেখা যায়না বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। পেটের ভিতর ঘাপটি মেরে থেকে প্রয়োজনীয় সমস্ত খাবার শুষে নেয় এই ‘লাম্প’। খাবার খেলেও তাই শরীর ক্রমশ রোগা হতে থাকে। অস্ত্রোপচারের পর আপাতত সুস্থ মাবিয়া। তবে এখনও দিন সাতেক তাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.