রাহুল রায়: ছিল রুমাল, হল বেড়াল। কেউ হয়তো ফাঁকা খাতা জমা দিয়েছেন। কারওর খাতায় ৫-৬টি প্রশ্নের জবাব রয়েছে। অথচ এসএসসির সার্ভারে তাঁদের নামের পাশে রয়েছে ভূরি-ভূরি নম্বর। হার্ড ডিস্কে থাকা খাতার সঙ্গে সার্ভারের আপলোড হওয়া নম্বরে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টে জমা দেওয়া সিবিআইয়ের ফরেনসিক রিপোর্টে উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। সিবিআইয়ের সেই রিপোর্ট দেখে কার্যত স্তম্ভিত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যাঁরা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের নিজের থেকে পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করেন বিচারপতি। যদি তা না হয়, তাহলে সেই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁরা যাতে ভবিষ্যতে চাকরি না পান সেই ব্যবস্থাও করবেন তিনি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের নিজের থেকে পদত্যাগ করা উচিত। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তাঁরা পদত্যাগ করবেন বলে প্রত্যাশা আদালতের। তা না করে তাঁরা যদি নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন, তাহলে আদালত কড়া পদক্ষেপ করবে। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনও সরকারি চাকরির জন্য তাঁরা আর আবেদন করতে পারবেন না। যাঁরা পদত্যাগ করবেন তাঁরা সেবিষয়ে এসএসসিকে জানাবেন। ১৬ নভেম্বর পরবর্তী শুনানি।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে এদিন কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ফরেনসিক রিপোর্ট জমা করে সিবিআই। সূত্রের খবর, হার্ড ডিস্কে থাকা নম্বর এবং এসএসসির সার্ভারে থাকা নম্বরে বিস্তর ফারাক রয়েছে। আর এসব ঘটেছে সুবীরেশ ভট্টাচার্য এসএসসির চেয়ারম্যান থাকাকালীন। এমনই দাবি তদন্তকারীদের। এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশে প্রচুর সংখ্যক সাদা খাতা জমা দেওয়া হয়েছে। প্রচুর খাতায় শুধুমাত্র ৫-৬টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-তেও একই জিনিস হয়েছে।
এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, এই উত্তরদাতাদের প্রত্যেককেই সুপারিশ পত্র ও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। সিবিআই নিঃশব্দে দিল্লি ও গাজিয়াবাদে হানা দিয়ে মূল নথি উদ্ধার করতে পেরেছে। তারপর তারা স্কুল সার্ভিস কমিশনের তথ্যর সঙ্গে যাচাই করছে। কালপ্রিটকে ধরতে হবে। তবে এই উত্তরপত্রের মালিকরা সুপারিশপত্র ও নিয়োগপত্র পেয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন। এ বিষয়ে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবে। সিবিআইয়ের থেকে এই সব তথ্য নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন জানাবে এদের মধ্যে কতজন অবৈধভাবে সুপারিশপত্র পেয়েছেন। মামলাকারীর আইনজীবীরাও কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে অবৈধভাবে নিযুক্তদের সংখ্যা খুঁজে বের করবে। এদিন এমনই নির্দেশ দেন বিচারপতি।
এর আগে সিবিআইয়ের কাজের সমালোচনা করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন অবশ্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাজের প্রশংসা শোনা যায় বিচারপতির গলায়। তিনি বলেন, আজকের রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে সিবিআই ভাল কাজ করছে, তাঁদের ধন্যবাদ। তাঁরা নিঃশব্দে অনেক অগ্রগতি করেছে। মূলচক্রীকে খুঁজে বের করতে পারবে বলে আশাবাদী হাই কোর্ট। দেশকে বাঁচাতে সিবিআই আধিকারিকদের নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। যে কোনওভাবেই দেশকে বাঁচাতে হবে। সেজন্যই সিবিআই, ইডি এবং অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থাগুলি আছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.