অর্ণব আইচ: টেটের ফাঁকা উত্তরপত্র পাঠাতে হবে। তাতে লেখা থাকবে না কোনও ইন্টারভিউয়ের নম্বর বা মার্কস। প্রত্যেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য! এই পদ্ধতিতেই মানিক টেট দুর্নীতিতে কোটি টাকা তুলেছিলেন বলে অভিযোগ ইডির।
মানিককে ইডি (ED) আধিকারিকরা প্রশ্ন করেন, কার নির্দেশ অথবা মদতে এত বড় দুর্নীতি করার সাহস পান তিনি? ইডির অভিযোগের আঙুল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) দিকেও। যদিও ইডি আধিকারিকদের দাবি, একাধিকবার এই প্রশ্ন করা সত্ত্বেও কোনও সদুত্তর মেলেনি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি ড. মানিক ভট্টাচার্যর কাছ থেকে। এই ব্যাপারে আরও তথ্য পেতে কলকাতা ও অন্যান্য জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কয়েকজন, এমনকী চেয়ারম্যানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ইডি। এদিকে, কতজন শিক্ষক ও শিক্ষিকাকে নিজেদের ইচ্ছামতো স্কুলে বদলি করে কত টাকা তোলা হয়েছে, সেই ব্যাপারেও ইডি বিস্তারিত তদন্ত করছে।
ইডির সূত্র জানিয়েছে, টেট পরীক্ষার পরপরই মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya) কলকাতা ও প্রত্যেক জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই চেয়ারম্যানরা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির অধীনস্থ। সেই সুযোগ নিয়েই মানিক চেয়ারম্যানদের রীতিমতো অলিখিত নির্দেশ দেন, তাঁরা যেন পরীক্ষার্থীর সই করা ফাঁকা উত্তরপত্র বা ডকুমেন্ট মাস্টার শিট, যা ওএমআর শিট বলেও পরিচিত, কলকাতায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দপ্তরে নিয়ে এসে জমা দেন। কোন জেলা থেকে কত সাদা উত্তরপত্র বা ফাঁকা শিট জমা পড়ছে, সেই খতিয়ান মানিক নিজেই রাখতেন। ইডির অভিযোগ, এর পর সেই উত্তরপত্রে সঠিক উত্তর চিহ্নিত করে তাতে ইচ্ছামতো নম্বর বসিয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশ করানো হয়। তার বদলে একেকজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে সাত থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্তও নেওয়া হয়েছিল। এভাবে টাকা দিয়ে পাশ করা বহু ‘অযোগ্য’ ও ভুয়ো প্রার্থী এখন রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতাও করছে বলে দাবি ইডির।
এই ব্যাপারে এর আগে জেরার সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলেও তিনি ‘সম্পূর্ণ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ব্যাপার’ বলে এড়িয়ে যান। এমনকী, ওই দুর্নীতির বিষয়টি তাঁর কানে এলেও তিনি মানিকবাবুকেই বিষয়টি দেখতে বলেন বলে ইঙ্গিত দেন। কিন্তু মানিকবাবু বা পর্ষদের অন্য কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যদিও ইডির মতে, পার্থবাবুর মদত ছাড়া মানিক ভট্টাচার্য এই দুর্নীতি করে টাকা তোলার সাহস পেতেন না। জেলাগুলি থেকে খবর নিয়ে ইডি জেনেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চেয়ারম্যানদের জোর করা হয় বলেই তাঁরা ‘বাধ্য হয়ে’ সাদা উত্তরপত্র মানিকবাবুর দপ্তরে পাঠান। কিন্তু ওই চেয়ারম্যানদের মধ্যে কেউ এই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কি না, তা জানার জন্যই তাঁদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.