অর্ণব আইচ: অল্পদিনের বন্ধুত্ব। তবু বন্ধুত্বের খাতিরেই তাঁকে টাকা দিয়েছিলেন কুন্তল। তিনি বিন্দুমাত্র জানতেন না যে, কুন্তল ঘোষ নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি নিজেও কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন। এমনই দাবি সোমার।
হৈমন্তীর পর এবার মুখ খুললেন সোমা চক্রবর্তী। বুধবার হোলির দিনেই দক্ষিণ কলকাতার নেতাজি নগরের বাড়িতে বসেই এই দাবি করলেন সোমা। কিছুদিন আগেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তদন্তে উঠে আসে সুন্দরী সোমা চক্রবর্তীর নাম। সোমাকে সিজিও কমপ্লেক্সের ডেকে পাঠায় ইডি। সোমার দাবি, ইডি তাঁকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত যা যা তথ্য দিতে বলেছিল, তা তিনি ইতিমধ্যেই দিয়েছেন। যদিও আরও কিছু ব্যাংকের তথ্য ও নথি নিয়ে আগামী শুক্রবার ইডি তাকে তলব করেছে সিজিও কমপ্লেক্স-এ। তিনি ইডির দফতরে গিয়ে ওই নথিগুলি জমা দেবেন ও ইডিকে সহযোগিতা করবেন। কিছুদিন আগে আদলত চত্বরে দাঁড়িয়ে কুন্তল দাবি করেছিলেন যে, তিনি সোমা চক্রবর্তী নামে কাউকে চেনেন না। এদিন সোমা মুখ খোলার পর কুন্তলের দাবি যে মিথ্যা, তা প্রমাণিত হল বলে দাবি বিভিন্ন মহলের।
নেতাজি নগর এলাকায় সোমার বাপের বাড়ি। এখানেই একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তার বাবা। এ ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতায় রয়েছে সোমার নিজস্ব ফ্ল্যাট। জানালেন, গত কয়েকদিন ধরে তিনি ব্যস্ত নথি সংগ্রহ করতে, যেগুলি জমা দিতে হবে ইডির দফতরে। হুগলির যুব নেতা কুন্তল ঘোষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের সূত্র ধরেই ইডি জানতে পারে, সোমা চক্রবর্তীর অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন কুন্তল। নিউটাউনে সোমার নিজস্ব পার্লার রয়েছে। ওই বিউটি পার্লারে নেল আর্টও হয়। কুন্তলের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে সোমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। সোমা চক্রবর্তীর দাবি, এক ‘কমন ফ্রেন্ড’-এর মাধ্যমে কুন্তলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর। মাঝেমধ্যে দেখা হত তাঁদের। ২০১৭ সালে ব্যবসার জন্য তাঁর টাকার প্রয়োজন ছিল। তিনি ব্যাংক থেকে কিছু ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যবসার খাতিরে তাঁর আরও টাকার প্রয়োজন ছিল।
কুন্তলের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকার সুবাদে সোমা তাঁর সমস্যার কথা কুন্তলকে বলেন। কুন্তল সোমাকে জানান, তিনি তাঁকে সাহায্য করবেন। ঋণ হিসাবে সোমাকে টাকা দেন কুন্তল। সেই কারণেই কুন্তলের অ্যাকাউন্ট থেকে সোমার অ্যাকাউন্টে কয়েক দফায় এসে পৌঁছয় ৫০ লক্ষ টাকা। যদিও সোমার দাবি, কুন্তল ব্যবসায়ী। তাই কম দিনের বন্ধুত্ব হলেও তিনি তাঁর কাছে টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, ওই টাকা নিয়োগ দুর্নীতির বা অন্য কোনও দুর্নীতির হতে পারে। অবশ্য ইডির দাবি, একই তথ্য সোমা তাঁদেরও জানিয়েছেন। ফলে তা যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে। সোমার দাবি, তিনি নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে কোনওমতেই যুক্ত নন। কিছুদিন আগে এই একই ধরনের দাবি করেছিলেন গোপাল দলপতি ওরফ আরমান গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়।
যদিও ইডি’র কাছে এমন খবর এসেছে যে, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তোলার ব্যাপারে সোমা চক্রবর্তীকে কাজে লাগাতেন কুন্তল। এদিন এই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন সোমা। তদন্ত ইডি জানতে পারে যে, সোমার অ্যাকাউন্টে যত টাকা ঢুকেছে, কিছুদিনের মধ্যেই তা অন্যান্য অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। এই ব্যাপারে সোমাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ব্যবসার জন্যই নেওয়া হয়েছিল ওই টাকা। বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনাকাটা ও ব্যবসার কাজে আগাম কিছু টাকা নেওয়া হয়। সেই টাকাই বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন সোমা। যদিও ইডি আধিকারিকদের মতে যে অ্যাকাউন্টগুলিতে সোমা টাকা পাঠান, সেগুলি আদৌ কোনও ব্যবসায়ির কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। ওই অ্যাকাউন্টের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই সেই উত্তর মিলবে। যাদেরকে ওই টাকা পাঠানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে কুন্তলের যোগাযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.