দীপঙ্কর মণ্ডল: লকডানে টানা ছ’মাস গৃহবন্দি হস্তশিল্পীরা। তলানিতে ঠেকেছে গ্রামীণ অর্থনীতি। দেশের সর্বত্র এই একই চিত্র। এ রাজ্যে মেদিনীপুরের মাদুর, বাঁকুড়ার ডোকরা, পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ, নদীয়ার মাটির পুতুল বা ধনেখালির তাঁত – বিক্রি হয়নি একটাও। তবে এবার ধুঁকতে থাকা গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা সেসব হস্তশিল্প (Handicrafts) নিয়ে একেবারে শহরের উপকণ্ঠে চলে এলেন শিল্পীরা। শুক্রবার থেকে কলকাতার ঢাকুরিয়ায় শুরু হলো ‘সৃষ্টিশ্রী’ (Sristisree) মেলা। রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলা থেকে স্টল করা হয়েছে। শুক্রবার মেলার উদ্বোধন করেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মেলা চলবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। খোলা থাকবে দুপুর দুটো থেকে রাত্রি আটটা। মেলার বিশেষ আকর্ষণ, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হাতে তৈরি জেলাগুলির বিশেষ খাবার।
ঢাকুরিয়া দক্ষিণাপণের পাশে কিছুটা খালি জমি ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর গত বছর সেখানে ‘সৃষ্টিশ্রী মার্কেটিং হাব’ গড়ে। ২৪টি স্থায়ী স্টলে বাংলার হস্তশিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বিপণনের ব্যবস্থা হয়। রাজ্যের প্রতিটি জেলার স্বনির্ভর দলের সদস্যদের তৈরি জিনিস সারা বছর বিক্রির বন্দোবস্ত করে সরকার। কয়েকদিন আগে সিদ্ধান্ত হয়, পুজোর আগে এখানে মেলা বসবে। সেইমতো স্থায়ী ছাড়াও কিছু অস্থায়ী স্টল তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার মেলা উদ্বোধন করে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee) বলেন, “সঠিক গুণমান অথচ কম দামে এমন সুন্দর সুন্দর জিনিস আপনি আর কোথাও পাবেন না। এখানে আপনি পাবেন বালুচরি, তসর, সিল্ক, কাঁথাস্টিচ, লিনেন, হ্যান্ডলুম ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ডিজাইনার শাড়ি বিশাল সম্ভার। এছাড়াও এখানে পাওয়া যাবে কুর্তা, পাঞ্জাবি, সালোয়ার, ডিজাইনার গামছা, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র।”
দক্ষিণাপণের পাশে কাঠের মূর্তি, বালুচরী, মধু, মাটির গয়না, মাটির ঘোড়া এবং ডোকরা সামগ্রী নিয়ে বসেছিলেন বাঁকুড়ার সুলেখা রক্ষিত। তিনি বললেন, “লকডাউনে ছ’মাস আমরা বাড়ি থেকে বেরতে পারিনি। একটা জিনিসও বিক্রি হয়নি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই মেলায় এসে ভাল লাগছে। প্রথম দিন বিক্রিবাটাও হয়েছে ভালই।” বিকেলের হঠাৎ বৃষ্টি কেনাকাটায় সামান্য ছন্দপতন করলেও সন্ধের পর ফের ভিড় বাড়তে থাকে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এমভি রাও মনে করছেন, পুজোর আগে এই মেলা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। অনেকেই প্রিয়জনদের জন্য উপহার সামগ্রী এখান থেকেই কিনে দিতে পারবেন।
‘আনন্দধারা’ প্রকল্পের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক ও রাজ্য মিশন আধিকারিক সৌম্যজিৎ দাসের স্থির বিশ্বাস, শুক্রবারই যা ভিড় হয়েছে, তা আরও বাড়বে। দীর্ঘদিন লকডাউন চলার পর এ দিনের মেলা ঘিরে প্রবল উৎসাহ। সাধারণ মানুষ তো বটেই, পঞ্চায়েত দপ্তরের আধিকারিকরাও দিনভর মেলায় ছিলেন। ‘আনন্দধারা’ প্রকল্পের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক অঞ্জন চক্রবর্তী মনে করেন, এই উদ্যোগ গোটা দেশকে পথ দেখাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.