কৃষ্ণকুমার দাস: যাঁদের উপর ভরসা করে সিপিএম এবার লোকসভা নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল আলিমুদ্দিনের সেই ‘দাপুটে’ সিপিএম প্রার্থীরা এবার নিজের বাড়ির বুথেই হেরেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, দুই তরুণ তুর্কি দীপ্সিতা ধর ও সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেদের লোকসভা কেন্দ্রে শুধু হারেননি যেখানে বসবাস করেন সেই পাড়াতেও ‘কাস্তে হাতুড়ি’কে জেতাতে পারেননি।
সুজন ও সায়নের বাড়ি সোনারপুরের দক্ষিণ বিধানসভার কালিকাপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই বুথেই হেরেছে সিপিএম। এমনকী ‘লাল শিবিরে’ অনেক আশা জাগানো যাদবপুরের সৃজন ভট্টাচার্য নিজের বাড়ি, যেখানে সেই ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃতীয় হয়েছেন, জিতেছেন সায়নী ঘোষ। হাওড়ার বালির নিশ্চিন্দায় নিজের বুথে সিপিএমকে জেতাতে পারেননি শ্রীরামপুরের সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর। তাঁর বাড়ি ১৮৯ বুথে তৃণমূল ৩৫৭ ভোট পেলেও সিপিএম পেয়েছে মাত্র ২৯৪ ভোট। প্রাপ্ত ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে আলিমুদ্দিন দেখেছে, রাজ্যে পাঁচ বছর আগে সিপিএমের ভোট ৬.৩ শতাংশ হলেও এবার কমে প্রায় ৫ শতাংশে নেমেছে। স্বভাবতই ২০১৯ সালে ‘রামে চলে যাওয়া ভোট’ বামে ফেরা দূরের কথা বুথভিত্তিক ফলের তথ্য বলছে, রাজ্যের অধিকাংশ বুথে এবছর আরও বেশি সংখ্যায় বামপন্থীরা পদ্মফুলে ভোট দিয়েছেন। যে তরুণ প্রজন্মকে ভরসা করে পার্টি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল তারা মুখ থুবড়ে পড়েছে, জমানতও জব্দ হয়েছে অধিকাংশের। ভোটের ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন অধরা, চরম হতাশ বাম ছাত্র-যুবরাও। রাজ্য কমিটির সদস্য আলিমুদ্দিনের এক প্রবীণ নেতার স্বীকারোক্তি, “এই নির্বাচন প্রমাণ করে দিল, লাল পতাকা নিয়ে এখন যে মুখই নামুক না কেন, রাজ্যের মানুষ বামেদের আর ভরসা করছে না।”
বামেরা এবার দমদমে সুজন চক্রবর্তী, শ্রীরামপুরে দীপ্সিতা ধর, তমলুক কেন্দ্রে সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরে প্রচারের ফানুস উড়িয়েছিল। সুজন ও সায়ন দুজনেই থাকেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভার কালিকাপুর-১ গ্রামে পঞ্চায়েতে। বাম জমানায় সুজনের স্ত্রী মিলি চক্রবর্তী এই পঞ্চায়েতের সদস্যও ছিলেন। ভোটের দিন একেবারে শেষপ্রহরে এসে নিজের ২৫৫ বুথে ভোটও দেন সুজন। এবছর ওই বুথে সিপিএম ৩০০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছে, ৫৫২ ভোট পেয়ে জিতেছে বিজেপি। তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ৩৯৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। অন্যদিকে তমলুকে পার্টির প্রার্থী হওয়া সায়নের বাড়ি একই গ্রামের ২৪৯ বুথে এবার ৩৭৫ ভোট পেয়ে জিতেছেন সায়নী। সিপিএম পেয়েছে মাত্র ৩০৩ ভোট, বিজেপি ২৪৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছে। সোনারপুর দক্ষিণের বিধায়ক লাভলি মৈত্র জানিয়েছেন, “পঞ্চায়েত ভোটে ২৪৯ বুথে তৃণমূল হারলেও এলাকার ছাত্র-যুব-মহিলা-শ্রমিক সংগঠনের সবাই মিলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে লোকসভা ভোটে জোড়াফুলকে জিতিয়েছি। আর সুজন চক্রবর্তীর বুথে আগে সিপিএম জিতে আসছিল, কিন্তু ২০১৯ ও ২০২৪, দুবছরই বামেরা অধিকাংশই পদ্মে ভোট দেওয়ায় বিজেপি জিতছে।”
২০১৯ সালের তুলনায় সুজনের বুথে এবছর তৃণমূলের ভোট ৮৬টি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে লাভলির দাবি, “পাঁচ বছর আগে তৃণমূল পেয়েছিল ৩০৯ ভোট, এবার ভোট বেড়ে ৩৯৫টি পেয়েছে জোড়াফুল। তবে বামপন্থীরা বিজেপিকে ঢেলে ভোট দেওয়ায় ওই বুথে এগিয়ে গিয়েছে পদ্মশিবির। অবশ্য সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা থেকে ১০,৪৪৭ ভোটের ব্যবধানে জিতেছে তৃণমূল।’’ একদা লালদুর্গ সোনারপুরের দুই দাপুটে নেতা শিবদাস ভট্টাচার্য ও শান্তি ভট্টাচার্যরা অবিভক্ত ২৪ পরগনা জেলা শাসন করতেন। সেই সোনারপুরের অনেক বুথে সিপিএম ৫০-এর নিচে ভোট পেয়েছে। উলটোদিকে দুই বিধায়ক লাভলি মৈত্র ও ফিরদৌসি বেগমের পাশাপাশি পুরপ্রধান ডা. পল্লবকুমার দাস, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলাই বারিকরা দলের সমস্ত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে সিপিএমকে এলাকায় তৃতীয় করে দিয়েছেন। সোনারপুর উত্তরে বিধায়ক ফিরদৌসি বেগম জোরকদমে লড়াই করে নিজের বিধানসভা থেকে প্রায় ৩৩ হাজার ভোটে লিড দিয়েছেন সায়নীকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.