গৌতম ব্রহ্ম: ফেসবুকে বিক্রি হচ্ছে বন্ধুত্ব! তা-ও আবার ‘এক্সপায়ারি’ ডেট-সহ৷ দাম পাঁচশো টাকা৷
বিক্রেতার নাম শিলাজিত্ মজুমদার৷ ইতিমধ্যেই ট্যাঁকের কড়ি ফেলে গায়ক-নায়কের ‘ফ্রেন্ডস লিস্ট’-এ ঢুকেছেন চারজন৷ সেই ছবি ঘটা করে ফেসবুকে পোস্টও হয়েছে৷
অনেকেরই বিষয়টি হজম হয়নি৷ তাঁদের মত, টাকার বিনিময়ে বন্ধুত্ব! এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক ট্রেন্ড৷ বন্ধুত্বের পক্ষে বেশ খারাপ বিজ্ঞাপন৷
শিলাজিতের অবশ্য হেলদোল নেই৷ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “নগদ না পেলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করব না৷ সে যে যাই মনে করুক৷” এখানেই থামছেন না ‘ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা’-র স্রষ্টা৷ জানিয়ে দিলেন, “ফেসবুকের বন্ধুত্ব ‘প্রোডাক্ট’-এর মতোই৷ তাই ‘এক্সপায়ারি ডেট’-ও রাখছি৷” পাঁচশো টাকা দিলে এক বছর শিলাজিতের বন্ধুর তালিকায় থাকা যাবে৷ যদিও প্রথম চারজন ক্রেতাকে ‘লাইফ টাইম মেম্বারশিপ’ দিয়েছেন সিউড়ির ‘শিলাদা’৷
বছরখানেক আগের ঘটনা৷ গড়িয়ার পঞ্চসায়র এলাকায় শিলাজিতের বাড়ি ‘অ্যাণ্টেনা’-য় বসে আড্ডা মারছিলেন একদল যুবক৷ হঠাৎই কয়েকজন যুবক শিলাজিৎকে অনুযোগ জানিয়ে বলেন, তাঁদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অনেকদিন ধরে ঝুলে আছে৷ কী হলে শিলাজিত্ তাঁদের অনুরোধে সাড়া দেবেন?
শিলাজিত্ ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পিছু পাঁচশো টাকা করে চেয়ে বসেন৷ চারজন রাজিও হয়ে যান৷ প্রতিশ্রূতি রক্ষা করেন গায়ক-অভিনেতা৷ দাম ধার্য হয় পাঁচশো টাকা৷ প্রথমে শিলাজিত্ শর্ত দেন, এই বন্ধুত্বের মেয়াদ মাত্র দু’মাসের৷ যদিও বছর গড়াতে চললেও বন্ধুত্বে কোপ পড়েনি৷ শিলাজিত্ জানালেন, “ওরা প্রথম ‘কাস্টমার’ তো৷ তাই ওদের লাইফটাইম মেম্বারশিপ দিয়েছি৷”
কিন্তু সত্যিই কী ফেসবুকে বন্ধুত্ব স্বীকার করার জন্য দাম নেওয়া উচিত? মূল্য দিয়ে কি মাপা যায় বন্ধুত্বের গভীরতা?
শিলাজিত্ কিন্তু জানিয়ে দিলেন, মজা করে নয়, অনেক ভেবেচিন্তেই তিনি এই কাজ করেছেন৷ এর আগে অটোগ্রাফ পিছু ষোলো আনা করে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন৷ এবার বন্ধুত্বকে নিলামে চড়িয়ে৷ জানালেন, “পাঁচ বছর ধরে ফেসবুকে আছি আমি৷ আমার নামে তিন-চারটে ফেসবুক অ্যাকাউণ্ট রয়েছে৷ একটি পেজও আছে৷ প্রতিটি অ্যাকাউণ্টেই চার থেকে সাড়ে চার হাজার বন্ধু৷ এখনও প্রতিদিন ৩০-৪০টা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আাসে প্রতিদিন৷ পুরনোগুলি ‘ডিলিট’ করে নতুনদের জুড়তে হয় তালিকায়৷ শিলাজিতের যুক্তি, “এখন টিকিট কেটে কেউ আমদের গান শোনে না৷ অটোগ্রাফ নেওয়ার হিড়িকও নেই৷ এখন সবাই সেলফি তুলতে চায়৷ আর ফেসবুকে বন্ধু হতে চায়৷ সেলফির জন্য তো টাকা চাওয়া মুশকিল৷ ফেসবুকে বন্ধু করার জন্য তো চাইতেই পারি৷”
শিলাজিতের কাণ্ড দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছেন রূপঙ্কর৷ জানিয়েছেন, “শিলাদাকে কুর্নিশ জানাই৷ একমাত্র ওর পক্ষেই এটা সম্ভব৷ আমারও তো ফেসবুক অ্যাকাউণ্ট রয়েছে৷ কিন্তু কোনওদিন মাথায় আসেনি৷ ভাবছি, আমিও শিলাদার পথ অনুসরণ করে বন্ধুত্বের কারবার খুলব৷” বন্ধুত্বের কারবারকে স্বাগত জানিয়েছেন চিত্র পরিচালক ও গায়ক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, “সাহসী পদক্ষেপ৷ তবে কারবারটা সেলফিতে সম্প্রসারিত হলে আরও ভাল হয়৷ আমিও ভাবনা-চিন্তা করছি৷”
তবে, মহিলাদের ছাড় দিয়েছেন শিলাজিৎ৷ জানালেন, “বান্ধবীদের জন্য স্বতন্ত্র একটি অ্যাকাউণ্ট রয়েছে৷ ওখানে ওই নিয়ম চালু করলে সবাই পালিয়ে যাবে৷ তাই ছেলেদের জন্য চালু করলাম৷ আগে ‘সফট লঞ্চ’ করেছি৷ পরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করব৷ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দেব, শিলাজিতের বন্ধু হওয়ার জন্য দাম দিতে হবে৷” শিলাজিতের আক্ষেপ, “লাইভ শো কমে গিয়েছে৷ কালো বলে কেউ আমায় সিনেমায় নিতে সাহস পাচ্ছে না৷ খাব কী? ভাবছি এই বন্ধুত্বের ব্যবসাটাই বাড়াব৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.