সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছবিকে বিকৃত করে অশ্লীল পোস্ট করার অভিযোগে বুধবার পুলিশ গ্রেপ্তার করল Specified Tarkata-র ‘অ্যাডমিন’ মণিময় আইচকে। সে দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজের তৃতীয় বর্ষের পদার্থবিদ্যার ছাত্র। কলকাতায় গড়িয়া স্টেশনের কাছে একটি মেসে ভাড়া থাকতে সে। তার মোবাইল ফোন ও পেনড্রাইভ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। অভিযুক্তকে পুলিশি হেপাজতে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানাচ্ছে, Specified Tarkata নামের ফেসবুক পেজটি চালু হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। শুরুর দিকে দেড় বছর সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে মজার মিম ও কার্টুন পোস্ট হত। ফলোয়ারের সংখ্যাও বাড়ছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। কিন্তু সম্প্রতি তাল কাটে। অতিরিক্ত জনপ্রিয়তা পাওয়ার লোভে ‘মজা’ বদলে গেল ‘নোংরামো’, ‘অসভ্যতা’য়। বিভিন্ন মহাপুরুষ ও বরেণ্য ব্যক্তিদের ছবি পোস্ট করে জুড়ে দেওয়া শুরু হল অশ্লীল ক্যাপশন যা ছাপার অযোগ্য। পেজটির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন রাজ্যের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছবি নিয়ে সাম্প্রতিকতম পোস্টটি তো শালীনতার সমস্ত সীমা অতিক্রম করে যায়। পেজটির বিরুদ্ধে অনলাইনে স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু করেন অনেকে। কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজেও বহু অভিযোগ জমা পড়ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ এদিন ফেসবুকে জানিয়েছে, ‘পেজটির বিকৃতমনস্ক পোস্টগুলি নজরে এসেছিল আমাদের সাইবার সেলের। অফিসাররা আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন পেজটির সঙ্গে যে বা যারা যুক্ত, তাদের খুঁজে বার করার। পেজ অ্যাডমিনকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজসাধ্য ছিল না। নিজের পরিচয় গোপন রাখতে চেষ্টার কসুর করেনি অ্যাডমিন। বুঝতে অসুবিধে হয়নি আমাদের, পেজের নাম “তারকাটা” হলে কী হবে, সাইবার-দুনিয়ার খুঁটিনাটি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নেপথ্যে থাকা ব্যক্তি।’ তবে সাইবার সেলের অফিসারদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল মেলে মঙ্গলবার রাতে। ধরা পড়ে ধারাবাহিক অশালীন পোস্টের কারিগর। এই খবর জানানোর পাশাপাশি পুলিশ সমস্ত সাইবার ক্রিমিনালদের সতর্ক করে জানিয়েছে, কোনওরকম অসভ্যতা বরদাস্ত করা হবে না।
ট্রোল সংস্কৃতি যে কী ভয়াবহ আকার নিতে পারে তার নমুনা সাম্প্রতিক অতীতে বারবার মিলেছে। এর আগে ‘বাঁকুড়া মিম’ নামের একটি ফেসবুক পেজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অভিনেত্রী পাওলি দামকে নিয়ে একাধিক অশ্লীল পোস্ট করে বিতর্কে জড়ায়। বাদ পড়েননি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। পর্নস্টার মিয়া খালিফার পাশেই তাঁর ছবি দিয়ে অশ্লীল পোস্ট করা হয়েছিল। যার তীব্র সমালোচনা করেছিল বাঙালি। কিন্তু তাতেও অবশ্য ট্রোলের জোয়ারে ভাটা পড়েনি। অভিনেত্রী পাওলি দামকে নিয়ে যে মিমে তৈরি হয়েছিল তাতে বাঙালির রুচিবোধের উপরই প্রশ্নচিহ্ন পড়েছিল। সমসাময়িক কোনও ঘটনা নিয়ে ব্যঙ্গ করা নতুন নয়। অতীতে ও বর্তমানে কার্টুনিস্টরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা করেছেন। তবে সে সবের মধ্যে যে শিল্পিত রুচিবোধের ছাপ থাকে, তার ছিটেফোঁটা নেই এই ধরনের ট্রোলে। বরং সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়োতে শালীনতার সীমা অতিক্রম করা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তৈরি করা মিম-এ সরাসরি কুকুরের সঙ্গে তুলনা করা হয় তাঁর। কিন্তু এই পেজগুলিকে চিহ্নিত করতে ও ডিলিট করতে পুলিশকেও বেগ পেতে হয়। বারবার অ্যাডমিন পালটে বা পেজের নাম বদলে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু সেই সব মানুষ, যাঁরা এই ধরনের পোস্টের নিচে কমেন্ট করে প্রশংসা করেন বা বাহবা দেন- তাঁদের মানসিকতাও কীরকম, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। যদিও পেজ অ্যাডমিনের এতে কোনও হেলদোল নেই। এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে সেই পোস্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.