ছবি: প্রতীকী
কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩৫। তার মধ্যে ছ’টি ওয়ার্ড একেবারে শুইয়ে দিয়েছে দক্ষিণ দমদমকে। ১০০০-এর বেশি আক্রান্তের বেশিরভাগটাই এই ছ’টি ওয়ার্ডের বাসিন্দা। প্রতি পরিবারের চারজন করে এই সংক্রামক রোগে ভুগছেন। একই পরিবারের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে এই মারণ রোগ সম্পর্কে মানুষের ঢিলেঢালা মনোভাবকেই দায়ী করছেন পুরকর্তারা।
দক্ষিণ দমদম থেকে প্রাপ্ত খবরে দেখা যাচ্ছে, ৯, ২৭, ২৯, ৩০, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। এগুলির মধ্যে সবার আগে রয়েছে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের অভিজাত এলাকা বাঙুর। এখানে ১৫০ জন আক্রান্ত। তারপরের তালিকায় রয়েছে আরও একটি অভিজাত এলাকা শ্রীভূমি। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের এই এলাকায় আক্রান্ত ১৪০ জন। এরপর রয়েছে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণদাঁড়ি অঞ্চল। মূলত ঘনবসতিপূর্ণ এই বসতি এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গিয়েছে। এইগুলি বাদে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নাগেরবাজারের মতিঝিল ও বাঙুর-যশোর রোডের ডায়মন্ড প্লাজা আবাসনে আক্রান্ত হয়েছেন বহুসংখ্যক মানুষ।
দক্ষিণ দমদমের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসক প্রবীর পালের বক্তব্য হচ্ছে, “একজন আক্রান্ত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে সেই পরিবারের বাকি সদস্যদের মধ্যেও রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে এটা আটকানো যেত”। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে যে, করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর লালারসের পরীক্ষা করাচ্ছেন নাগরিকরা। কিন্তু যতদিন না সেই রিপোর্ট হাতে আসছে ততদিন সবার সঙ্গে মেলামেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে পরিবারের মধ্যেই। স্বাস্থ্য বিভাগের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিলে বাকিরা রেহাই পাবেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা করছেন না। ফলে পরিবারের বাকিরাও এই মারাত্মক সংক্রমক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
পুরসভার তথ্য বলছে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের এক ব্যক্তি আক্রান্ত হন। তাঁর থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে সেই পরিবারের ন’জন করোনাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মতিঝিলের একটি পরিবারের পাঁচজন আক্রান্ত। একই অবস্থা ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাড়িতে। ডায়মন্ড প্লাজাতেও একই ধরনের ছবি দেখা যাচ্ছে। পুরসভার বক্তব্য, দক্ষিণদাঁড়ি বাদে এই পুরঅঞ্চলের অভিজাত এলাকাগুলোতে এই রোগের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি। সেই তুলনায় এই পুরসভা অঞ্চলের বহু গরিব এলাকাতে সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। লকডাউন বা সামাজিক দূরত্বের প্রচার চালিয়ে মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব হয়েছে, সাবধানতা অবলম্বন করতে বাধ্য করা গিয়েছে। ফলে সেই অঞ্চলগুলিতে অবস্থা কিছুটা আয়ত্তে। কিন্তু অবস্থাপন্ন ওয়ার্ডগুলিতে তা করা সম্ভবপর হচ্ছেনা কিছুতেই। অন্যদিকে, বিধাননগরের করোনা চিত্রের উন্নতি এদিনও লক্ষ্য করা যায়নি। গত ২৪ ঘন্টায় বিধাননগর পুরনিগম এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০২, এই নিয়ে মোট আক্রান্ত ২২৯৭ জন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.