সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি লোকায়ত স্তর থেকে উঠে আসা দেবতা। বঙ্গসংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বড়ই নিবিড়। প্রাচীনকালে কালীঘাটের পটচিত্রে এর প্রমাণ মেলে। কিন্তু দুর্গাঠাকুরের বাকি তিন ছেলেমেয়ের সঙ্গে তাঁর প্রভেদও রয়েছে। এই বাংলায় কার্তিক ঠাকুরের আরাধনা যুগের পর যুগ ধরে করে এসেছেন বারবনিতারা। অন্যথায় কারও বাড়ি কার্তিক ফেললে তবেই পুজো হয়। এবার সেই দেহোপজীবিনীদের পরিকল্পনায় কার্তিক আরাধনা হবে বারোয়ারি। সোনাগাছির যৌনকর্মীরা আর সাধারণের থেকে দূরে সরে কার্তিক পুজো করবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখানকার শীতলা মন্দিরের পাশে আলোকিত মণ্ডপে হবে কার্তিক আরাধনা।
কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী’র মতো গ্রন্থ থেকে জানা যায়, অষ্টম শতকে উত্তরবঙ্গে ঘরে ঘরে কার্তিক পুজো হত। পরবর্তী সময়ে, চোরডাকাতদেরও আরাধ্য দেবতা ছিলেন কার্তিক। কিন্তু এই বঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে সেভাবে আর বারোয়ারি পুজো হয়নি। সোনাগাছির মতো যৌনপল্লিতে বাড়িতে বাড়িতে আরাধনা হত কার্তিকের। কিন্তু সেই পুজোতে সাধারণের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধই। এবার বারোয়ারি পুজোয় কার্তিক পূজিত হবেন। সাধারণ মানুষরাও সেই পুজোয় শরিক হবেন। এতদিনকার প্রচলিত এক ধারাকে এভাবেই বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোনাগাছির যৌনকর্মীরা।
বঙ্কিমের ‘বাবু’ প্রবন্ধে দেখা যায়, ‘উপগৃহিণীর অনুরোধে সরস্বতী পূজা’ করেন বাবুরা। অর্থাৎ বারবনিতাদের মধ্যে সরস্বতীর পুজোরও প্রচলন ছিল। পরবর্তী সময়ে সরস্বতী পুজো বারোয়ারি হলেও কার্তিক থেকে গিয়েছেন আড়ালেই। সন্তানকামীরা অবশ্য পুজো করেন কার্তিকের। কিন্তু ‘বাবু’ কার্তিকের আরাধনা ঘরে ঘরে করে গিয়েছেন বারবনিতারাও। ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’য় ‘উঁচুগতি কার্তিকের মত বাউরি চুল’ কার্তিকের কথা আছে। তাঁকে কার্যতই ‘বাবু’ বলে আরাধনা করেন দেহোপজীবিনীরা। আসলে ঋগ্বেদে যাঁকে ‘কুমার’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, সেই অবিবাহিত কার্তিকেক মতো ‘বাবু’ই চান বারবনিতারা। আর সেই পুজো এবার বারোয়ারি। যে প্রসঙ্গে যৌনকর্মীদের সন্তানদের সংগঠন জানাচ্ছে, বদলাতে থাকা সময়কালের কথা মাথায় রেখেই এই উৎসবকে সামাজিক চেহারা দিতে চায় তারা। তাই এমন পরিকল্পনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.