স্টাফ রিপোর্টার: সোনাগাছিতে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির অফিসে প্রৌঢ়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই কিশোরীর সঙ্গে রয়েছে তাদের কোন সঙ্গী? ওই সঙ্গীরাই কি খুনের সময় সাহায্য করেছিল দুই কিশোরীকে? খুনের তদন্তে উঠে এসেছে এই প্রশ্ন৷ পুলিশের সন্দেহ, এই খুনের পিছনে রয়েছে কোনও দালালচক্রও৷ খুনের পর সেই চক্রের হাত ধরেই সোনাগাছির নীলমণি মিত্র লেনের ঘর থেকে পালিয়ে গিয়েছে দুই ‘হত্যাকারী’৷ নিহত কবিতা রায়ের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন বুধবার রাতে উত্তরবঙ্গের কিষানগঞ্জ লাগোয়া এলাকায় দেখা গিয়েছে৷ পুলিশের মতে, দুই কিশোরী প্রৌঢ়ার মোবাইল নিয়ে পালানোর পর একবারই ওই ফোনটি ‘অন’ করে৷ তাতেই বোঝা যায়, যে তারা উত্তরবঙ্গে রয়েছে৷ তাদের সন্ধানে কিষানগঞ্জে রওনা দেয় পুলিশের একটি টিম৷ বনগাঁর গোপালনগরের বাসিন্দা অভিযুক্ত দুই কিশোরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল ওই এলাকারই এক কলেজ ছাত্রীর৷ তাঁকে জেরা করেও বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ৷ বনগাঁয় গিয়ে দুই কিশোরীর বেশ কয়েকজন বান্ধবীকেও পুলিশ জেরা করে৷ ওই দুই কিশোরীকেই উদ্ধার করে রাখা হয়েছিল নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের দুর্বারের অফিসে৷ তাদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রৌঢ়া কবিতা রায়কে খুন করে পালায় দুই কিশোরী৷
পুলিশ জানিয়েছে,নিহত প্রৌঢ়া কবিতার মোবাইল থেকে হওয়া দু’টি কলই ঘুরিয়েছে তদন্তের মোড়৷প্রৌঢ়ার মোবাইলের কল লিস্ট ঘেঁটে দেখা গিয়েছে,মঙ্গলবার রাত দশটার পর একটি অচেনা জায়গায় কল গিয়েছে ওই মোবাইল থেকে৷ময়নাতদন্ত থেকে জানা গিয়েছে,রাত এগারোটা নাগাদ খুন হন কবিতা৷পুলিশের ধারণা,এক কিশোরী কাউকে লুকিয়ে ফোন করছিল৷ তা দেখতে পেয়েই বাধা দিতে যান কবিতা৷তখনই তাঁর মাথায় নোড়া দিয়ে মেরে ও গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়৷কিন্ত্ত কবিতার বিছানা তছনছ করা হয়েছিল৷পুলিশের প্রশ্ন,তবে কি ফোন করে সঙ্গীদের ডেকে এনেছিল দুই কিশোরী?আবার কবিতার কোনও পরিচিত তাঁকে ডাকার পর তিনি নিজেই গেট খুলে দেন ও ওই পরিচিতরাই খুন করার পর ভয় ও লোভ দেখিয়ে দুই কিশোরীকে নিয়ে পালায়,এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচেছ না৷কারণ,দুর্বারের অফিস থেকে লুঠ করা সাড়ে সাতশো টাকা ছাড়া তাদের কাছে কিছু নেই৷ যদিও পুলিশের দাবি, খুনের মূল অভিযুক্ত ওই দুই কিশোরীই৷
এই খুনের ঘটনার পিছনে দুই কিশোরীর সুচতুর পরিকল্পনা রয়েছে বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা৷ তাঁদের মতে, পরামর্শ করে কোনও চক্রের সঙ্গেই তারা কলকাতা ছেড়েছে৷ কাশ্মীর বা গুজরাতে দু’জনের প্রেমিকের কাছে যাওয়ার জন্য বনগাঁয় বসেই ছক কষেছিল বলে মনে করছে৷ সেই ঘটনায় তাদের অন্য বান্ধবীর সঙ্গে জড়িত রয়েছে কোনও চক্র৷ প্রেমিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন চোখে থাকা দুই কিশোরীকে ফাঁসানোর সহজ পথ বেছে নিয়েছিল চক্রটি৷আর সেই কারণে বনগাঁ থেকে সোজা এনে সোনাগাছিতে টাকা রোজগারের রাস্তায় এগিয়ে দেওয়ার পরেই সম্ভবত কিশোরীরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে৷ চটজলদি টাকা রোজগারের উপায় খোঁজা ও কলকাতার নিষিপল্লিকে সেই ঠিকানা বেছে নেওয়া, মাঝখানে নাবালিকা বলে ধরা পড়া,আবার যে কোনও বাধা অতিক্রম করে খুন করে পালিয়ে যাওয়া– এই গোটা ঘটনা ঘটানো একা দুই কিশোরীর পক্ষে যে সম্ভব নয়,তাই খুনের পিছনে কোনও বিশেষ চক্র জড়িত থাকার বিষয়টি ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.