সুব্রত বিশ্বাস: এবার পুজোয় ভুবন মাতলেও আনন্দ নেই সোনাগাছির বাসিন্দাদের মনে৷ গত তিন বছর উমা সেখানে এলেও এবার আর আরাধনার আয়োজন করছেন না তাঁরা৷ ‘লাল বাতি’ এলাকা পুজোর ক’টা দিন রামধনুর রঙে সেজে উঠছে না এবার৷ তাই মনেও রং নেই সেখানকার দশ হাজার বাসিন্দার৷
সুচিত্রা, সাধনাদের কথায়, “আমরা চিরকালই সমাজে উপেক্ষিত ও বঞ্চিত৷ বাইরে যতটা আলো, এখানে ততটাই অন্ধকার৷ আমাদের পুজো না হলে কী-ই বা এসে গেল ভদ্র সমাজের৷” সোনাগাছিতে এবার পুজো হচ্ছে না৷ সাফ জানিয়ে দিলেন সোনাগাছির যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদিকা ভারতী দে৷ তিনি বলেন, “আদালতের অনুমতিতে পুজোর শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে৷ ছোট জায়গায় পুজোর আয়োজন৷ পুজোয় মাততে পারেন না সব বাসিন্দা৷ এই ছোট জায়গায় পুজো সম্ভব হচ্ছে না৷
আইনি লড়াইয়ে আর ধৈর্য রাখা যাচ্ছে না৷ তাই এবার পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ পুজোর জন্য তোলা চাঁদার টাকা এবার মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করা হবে৷” এক সময় সুচিত্রা, সুপ্রিয়াদের আইনি লড়াইয়ে পুজোর অনুমতি দিয়েছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সে সময় মামলা হয় ডিভিশন বেঞ্চে৷ বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৃণাল চৌধুরির ডিভিশন বেঞ্চ পুজোর পক্ষে রায় দেন৷ কিন্তু ২০১৫ সালে দেখা দেয় নতুন সমস্যা৷ পুজোর কলেবর বাড়ায় বড় করে পুজো করতে চান সোনাগাছির বাসিন্দারা৷ মামলা গড়ায় হাই কোর্টেও৷ পুলিশ জানিয়েছিল, সোনাগাছির সংকীর্ণ রাস্তায় বড় করে পুজো হলে যানজটের সৃষ্টি হবে৷ আদালতে প্রশ্ন ওঠে, কলকাতার বহু রাস্তায় এমন বড় পুজো হয়৷ তবে কেন সোনাগাছি পুজোর অনুমতি পাবে না? বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এই প্রশ্ন তোলেন৷ মামলায় আবার জয় যৌনকর্মীদের৷
রায় পেয়ে অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিটে পুরসভার কমিউনিটি হলের সামনে পুজোর আয়োজন হয়৷ আগের তুলনায় একটু বড় হলেও মন ভরেনি উদ্যোক্তাদের৷ ভারতী দে বলেন, “সোনাগাছির দশ হাজার যৌনকর্মী৷ পুজোর সময় যোগ দেন কালীঘাট, বউবাজার-সহ জেলার যৌনকর্মীরা৷ ফলে ওই ছোট জায়গায় পুজোর আয়োজন হলে সমস্যা হয়৷ ঝামেলা এড়াতেই পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত৷” তবে পুজো হবে না তা জানেন না স্থানীয় কাউন্সিলর সুনন্দা সরকার৷ তিনি বলেন, “পুজোয় পুরসভা সহযোগিতা করবে৷ পুজো হচ্ছে না এই মাত্র শুনলাম৷ মাতৃ সংগঠন থেকে মাতৃ আরাধনা করা হয়, এটা বড় ব্যাপার৷ তবে ওঁদের ওখানে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব থাকে৷ আমাদের জানালে সুবিচারের ব্যবস্থা করব৷” মন্ত্রী শশী পাঁজা গত বছর পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন৷ পুজো বন্ধের কথা তাঁকে জানানো হয়নি৷ তিনি বলেন, “ওঁরা কোনও অসুবিধার কথা জানাননি৷ ওঁদের পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত জানা নেই৷” দুর্বার একতরফা পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আবার ক্ষোভও রয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.