Advertisement
Advertisement
Calcutta HC

সম্পত্তি হাতাতে সম্পর্কে ‘বিষ’ ঢালে ছেলে! বিচ্ছেদ ভুলে আদালতে হাতে হাত প্রবীণ দম্পতির

এ যেন বাস্তবের 'বেলাশেষে'।

Son allegedly tries to spoil parents' relationship to gain property। Sangbad Pratidin

প্রতীকী ছবি।

Published by: Biswadip Dey
  • Posted:November 12, 2022 1:05 pm
  • Updated:November 12, 2022 6:55 pm  

রাহুল রায়: শেষবেলায় আবার শুরু, ফিরে এল দম্পতির ইচ্ছে-ম্যাজিক। আর তাতেই ভর করে বৃদ্ধ দম্পতিকে একসঙ্গে থাকার পরামর্শ দিল হাই কোর্ট (Calcutta HC)। ঘটনাক্রম সিনেমার ‘ক্লাইম্যাক্স’কেও হার মানায়। সম্পত্তি হাসিলের উদ্দেশে মাকে হাতিয়ার করেছিল বড় ছেলে। তাঁর কথামতো নেহাত রাগের বশে বছর আটাত্তরের স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় বধূ নির্যাতনের মামলা ঠুকেছিলেন বছর চৌষট্টির স্ত্রী। অভিমানে আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জানিয়েছিলেন বৃদ্ধ। কিন্তু হাই কোর্টে মামলা গড়াতেই যুগলের সব ভুল ভেঙে গিয়ে মধুরেণ সমাপয়েৎ। শুক্রবার যার সাক্ষী থাকল কলকাতা হাই কোর্টের ভরা এজলাস।

জীবনের সরণি বেয়ে, হাতে হাত ধরে সংসারের চড়াই-উতরাই উজিয়ে অনেক পথ এগিয়েছেন। এখন দু’জনেই প্রবীণ। কিন্তু বৃদ্ধ বাবাকে বিপাকে পড়তে হয় নাবালকের পুত্রের নামে সম্পত্তি কিনে। নাবালক সাবালক হয়ে বিয়ে করতেই সব কিছু বদলে যায়। যার জেরে শেষ জীবনে এসে শুধু সম্পত্তি নয়, স্ত্রী-ছাড়াও হতে হচ্ছিল আটাত্তর বছরের বৃদ্ধকে। কিন্তু গুণধর ছেলের সম্পত্তি হাতানোর ‘ছক’ সফল হল না হাই কোর্টের হস্তক্ষেপে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ইউক্রেনের ভারতীয় পড়ুয়ারা পড়াশোনা শেষ করুক রাশিয়ায়, ‘বন্ধু’ ভারতকে প্রস্তাব মস্কোর]

এদিন হাই কোর্টে মামলার শুনানিতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দুজনেই এক সঙ্গে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। প্রবীণা স্ত্রীকে এজলাসে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সহ্য করতে পারেননি বৃদ্ধ স্বামী। অঝোর নয়নে বলেন, ‘‘শেষ জীবনে ওকে কে দেখবে আমি ছাড়া। ও ছাড়া আমারও কেউ নেই। ও থাকতে চাইলে আমার কোনও আপত্তি নেই।’’ জানান, নিম্ন আদালতে বিচ্ছেদ মামলা তুলে নেবেন। স্ত্রীও জানান, এই বৃদ্ধ বয়সে এমনটা হয়ে যাবে, ভাবতে পারেননি। তিনিও শান্তিতে থাকতে চান।

কার্যত দম্পতির ইচ্ছাকে মান‌্যতা দিয়ে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা তাঁদের এক সঙ্গে থাকতে বলেন। আদালতের নির্দেশ, ঝাড়গ্রামের (Jhargram) বাড়িতেই একসঙ্গেই থাকবেন স্বামী-স্ত্রী। দম্পতির বড় ছেলে এবং ছোট ছেলে পৃথকভাবে প্রতিমাসে বাবা-মায়ের হাতে চার হাজার টাকা করে তুলে দেবেন। সেই টাকায় ওঁরা সংসার চালাবেন। দম্পতির মধ্যে এ বিষয়ে যাতে কোনও গণ্ডগোল না হয়, তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। নজরদায়িত্বের দায়িত্বে থাকবেন সাঁকরাইল থানার এক মহিলা কনস্টেবল।

[আরও পড়ুন: বিচারপতি নিয়োগে কেন্দ্রের বিলম্ব নিয়ে রুষ্ট সুপ্রিম কোর্ট, নোটিস আইন মন্ত্রকের সচিবকে]

ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা পুরুষোত্তম মণ্ডল। কয়েক যুগ আগে পুষ্পরানির সঙ্গে চারহাত এক হয়েছিল তাঁর। দীর্ঘ সময় সংসার করলেও জীবন সায়াহ্নে এসে স্ত্রী ও ছেলে মিলে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ বৃদ্ধের। তাঁর আইনজীবী প্রদীপ পাল জানান, পুরুষোত্তমবাবু মনস্থির করেন, বাকি জীবনটুকু স্ত্রী পুষ্পরানির সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় মুছে ফেলে আলাদাভাবে বাঁচবেন। ঝাড়গ্রামের নিম্ন আদালতে বিবাহ-বিচ্ছেদ চেয়ে মামলা দায়ের করেন। এরই মধ্যে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় বাড়ি ফিরতে চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন পুরুষোত্তম।

এদিন মামলায় বৃদ্ধের স্ত্রী ও বড় ছেলেকেও হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। আদালতে বৃদ্ধ জানান, সম্পত্তির জন্য বড় ছেলে স্ত্রীকে দিয়ে তাঁরই বাড়ি থেকে তাঁকে বার করে দিয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের আগে একমাত্র সন্তানের জন্য ঝাড়গ্রামে বসতবাড়ি গড়েছিলেন। কিন্তু ভাবতে পারেননি, সম্পত্তির লোভে সেই ছেলেই এমনটা করবে। আদালতে বড় ছেলের আইনজীবী শুভনীল চক্রবর্তীর দাবি, ”পুষ্পরানি দেবীর উপরে অত্যাচার করতেন তাঁর স্বামী। এই নিয়েই নিম্ন আদালতে বধূ নির্যাতনের মামলাও দায়ের হয়। সেই কারণেই মাকে নিজের কাছে রেখেছিল বড় ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ‌্যা।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement