Advertisement
Advertisement

Breaking News

রিকশ ইউনিয়ন সহায়, ছেলের হাত ধরে ঘরে ফিরলেন বিতাড়িত বৃদ্ধা মা

ছেলেকে তোমরা কিছু বোলো না, এরপরও আবেদন মায়ের।

Son embraces abandoned mother, thanks to Rickshaw union
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 19, 2018 1:48 pm
  • Updated:January 19, 2018 3:36 pm  

আকাশনীল ভট্টাচার্য, বারাকপুর: রাস্তার ধারে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছিল ছেলে। বলেছিল, কয়েকটা জিনিস কিনে ফিরে এসে নিয়ে যাবে। আর ফেরেনি। ঠান্ডায় জবুথবু বৃদ্ধার দু-চোখে অসহায়তা। কোথায় যাবেন, কীভাবে ফিরবেন, কীইবা খাবেন কিছুই জানতেন না। দু-চারজন পড়ুয়া তাঁকে উদ্ধার করে একটা মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করেছিলেন। খোঁজ চলছিল তাঁর ছেলের। অবশেষে তাঁর সন্ধান মিলল। সমস্যার সুরাহাও হল। শেষমেশ ছেলের হাত ধরেই ঘরে ফিরলেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা। সহায় অবশ্যই তৃণমূল পরিচালিত রিকশ ইউনিয়ন।

হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের ভূরিভোজ, অন্যরকম বিবাহবার্ষিকী পালন ]

Advertisement

ঘটনা গত বৃহস্পতিবারের। টিটাগড় থানার বারাকপুর সেন্ট্রাল রোডের ই-রোডের মুখে বন্ধ একটি সোনার দোকানের সামনে বাসন্তী মন্ডলকে ফেলে রেখে চলে যায় তাঁর ছেলে। ছেলে পেশায় রিকশচালক। নাম গণেশ মন্ডল। রিকশ করে বৃদ্ধা মাকে নামিয়ে ছেলে গণেশ বলেছিল,”তুমি এখানে বসে থাক। একটা জিনিস কিনে এনে তোমাকে নিয়ে যাব।” কিন্তু ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘক্ষণ কাটানোর পরও ছেলের কোনও পাত্তা মেলেনি। টিউশন সেরে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন পড়ুয়া ওই বৃদ্ধাকে ঠান্ডায় কাতরাতে দেখে। তারাই গোটা বিষয়টা প্রাক্তন পুরপিতা মিলন কৃষ্ণ আশকে জানায়। বিষয়টি টিটাগড় থানাতেও জানানো হয়। সে রাতেই বৃদ্ধাকে বারাকপুর স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে ১০ নম্বর ওয়ার্ড অফিসে থাকবার বন্দোবস্ত করা হয়। এমনকী ওই বৃদ্ধার গায়ে শীতবস্ত্র এবং তাঁকে খাবার-দাবারও দেওয়া হয়।

বিচারকের দাওয়াইয়ে কাজ, মিষ্টিমুখে পুনর্মিলন সিউড়ির দম্পতির ]

শুক্রবার সকালে বয়সের ভারে ন্যুব্জ ওই মহিলাকে ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের টিকিট কাউন্টারের পাশে রাখা হয়। ওখানকার তৃণমূল সমর্থিত রিকশ ইউনিয়নের সভাপতি বুলু ঘোষ জানান, ওঁকে খাবার দেওয়া হয়েছে। থানায়ও বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওঁর ছেলের খোঁজ করা হচ্ছে। এদিকে ওই রিকশস্ট্যান্ডের দুই রিকশচালক ঝন্টু বিশ্বাস ও নারায়ণ জানা-সহ অন্যান্যরা বৃদ্ধার ছেলে গণেশের খোঁজ চালাতে গিয়ে বারাকপুর চন্দনপুকুর বাজারের লালবাজার এলাকায় তাঁর সন্ধান পান। সেখান থেকে গণেশকে তাঁর মায়ের কাছে আনা হয়। গণেশ মন্ডল জানিয়েছেন, ‘নিজস্ব বাড়ি নেই। ঘুরে ঘুরে রিকশ চালাই। যেখানে খুশি সেখানে রাত কাটাই। তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমার সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে কোনও সম্পর্ক নেই।’ জানা গিয়েছে, দেবপুকুরের সূর্যপুরের গণেশপুরে মেয়ের কাছে থাকতেন বাসন্তীদেবী। মেয়ের নাম লক্ষ্মী মন্ডল এবং জামাইয়ের নাম নিশিকান্ত মন্ডল। নিশিকান্তবাবু বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে আর থাকতে দিতে নারাজ। অভিযোগ, তিন দিন আগে জামাই নিশিকান্ত ওই বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ওঁর ছেলে গণেশ মন্ডল বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় নামিয়ে চম্পট দিয়েছিলেন। বৃদ্ধা বাসন্তী মন্ডল বলেন, স্বামী সন্ন্যাসী মন্ডল জোগাড়ের কাজ করতেন। পাঁচ বছর আগে উনি মারা গিয়েছেন। এখন ছেলে ও মেয়ে কেউই তাঁকে রাখতে চাইছে না।

খোঁজ নেয় না অফিসার ছেলে, প্রশাসনের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন বৃদ্ধার ]

এদিকে ছেলে গণেশকে মায়ের কাছে আনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। অবশেষে দেবপুকুরের খেলার মাঠের কাছে একটি ভাড়া বাড়ি ঠিক করে দেওয়া হয় এবং শুকনো খাবার-দাবার বৃদ্ধার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। রিকশয় চাপিয়ে গণেশ সেই বাড়িতে মাকে নিয়ে যায়। ওই বৃদ্ধার নজরদারি চালাবে তৃণমূল সমর্থিত রিকশ ইউনিয়নের লোকজন। তাছাড়া বৃদ্ধার ছেলের মোবাইল নম্বার ও বর্তমান ভাড়া বাড়ির ঠিকানা পুলিশ লিখে রেখেছে। বৃদ্ধার মেয়ের বাড়ির এক পড়শি ভোলা নস্কর জানালেন, ওই মহিলার কিছু জায়গা-জমি ছিল খড়দার রুইয়ার বড়বাগান এলাকায়। পাঁচ বছর আগে সেই জমি বিক্রি করে দিয়ে ওঁর ছেলে ও মেয়ে সেই টাকা-পয়সা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছে। তারপর থেকে আর কেউই ওঁকে রাখতে চাইছে না। ছেলের হাত ধরে ফেরার সময় বৃদ্ধা মা বলেন, ‘গণেশকে তোমরা কিছু বোলো না। ও এসে আমাকে ঠিক নিয়ে যেত। ওর কোন দোষ নেই।’ পথচলতি সাধারণ মানুষের অনেককেই বলতে শোনা গেল “মা হওয়া কি মুখের কথা!” একেই বোধহয় বলে মাতৃস্নেহ।

মোবাইলে ব্যস্ত ট্রাফিক পুলিশ, ভিডিও তুলে থাপ্পড় খেলেন তরুণী ]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement