অর্ণব আইচ: চলন্ত গাড়ি থেকে লুট ‘মহিলা গ্যাং’য়ের। অপরাধের মাস্টারমাইন্ড ওই মহিলাদের বাড়িরই কর্তা। এক ভুয়ো পুলিশ। সে বাড়ির বউদের নিয়ে তৈরি করেছিল লুঠেরা দল। রীতিমতো পুলিশের পোশাক পরে গাড়ি থামিয়ে স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রী-সহ তিন মহিলাকে কাজে লাগিয়ে বিমানবন্দর যাওয়ার পথে এক ব্যক্তির গাড়ির ভিতর থেকে ব্যাগ লুট করেছিল ওই গ্যাং। যদিও শেষ পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরেই ওই ব্যক্তিকে পূর্ব কলকাতার প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ শনাক্ত করে। বিধাননগর দক্ষিণ এলাকার নবপল্লি থেকে বিশ্বনাথ দে নামে ওই ভুয়ো পুলিশকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের অভিযোগ, সে কলকাতার একটি রুটের অটো ইউনিয়নের নেতা। তার পরিবারের দুই বউ মীরা দে ও লক্ষ্মী দেকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগেও বিশ্বনাথ নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে একাধিক অপরাধ ঘটিয়েছে। সেই ক্ষেত্রে স্ত্রী বা পরিবারের কারও সাহায্য নিয়ে ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া দশটা নাগাদ এই ঘটনার সূত্রপাত। দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থানা এলাকার মতিলাল নেহরু রোডের এক বাসিন্দা বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোন। নিজের গাড়িতে করেই যাচ্ছিলেন। তিনি বসেন চালকের পাশে। গাড়ির পিছনের সিটের পিছনদিকে রাখা ছিল ল্যাপটপের ওই ব্যাগ। তাতে ল্যাপটপ ছাড়াও ছিল আরও বেশ কিছু মূল্যবান বস্তু। তাঁর গাড়িটি পরমা আইল্যান্ডের কাছে এলে দেখেন, ইউনিফর্ম পরা এক পুলিশ আধিকারিক হাত দেখিয়ে গাড়িটি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। অভিযোগকারী গাড়ি চালককে বলেন থামাতে।
‘পুলিশ আধিকারিক’ এগিয়ে এসে বলে, যেহেতু রাতে কড়া বিধিনিষেধ শুরু হয়ে গিয়েছে, তাই রাস্তাঘাটে গাড়ি নেই। তার পরিবারের মহিলারা নিমন্ত্রণ সেরে বাড়ি ফিরতে পারছে না। তাদের চিংড়িঘাটার কাছে গাড়ি করে নামিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ওই অবস্থায় রাজি হয়ে যান তিনি। গাড়ির পিছনের সিটে বসে তিন মহিলা। চিংড়িঘাটার কাছে তারা নেমে যায়। বিমানবন্দরে নামার সময় অভিযোগকারী দেখতে পান যে, তাঁর ল্যাপটপ ও মূল্যবান ব্যাগটি উধাও হয়ে গিয়েছে গাড়ি থেকে। ওই ব্যাগেই ছিল প্রয়োজনীয় নথি। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি প্রগতি ময়দান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে। ফুটেজে দেখা যায় পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তির ছবি। ছবিটি এলাকার বাসিন্দাদের দেখানো হয়।
তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আধিকারিকদের জানান যে, সে বিভিন্ন সময় পুলিশের পোশাক পড়ে ওই অঞ্চলে টাকা তোলে। পুলিশ তার সন্ধান শুরু করে। একটি সূত্রে জানা যায় যে, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি আসলে স্থানীয় একটি অটো ইউনিয়নের নেতা। তার নিজের অটো রয়েছে। সেই সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে যে, তার বাড়ি সল্টলেকের নবপল্লিতে। শুক্রবার সকালেই সল্টলেকের নবপল্লিতে হানা দিয়ে বাড়িটি শনাক্ত করে বিশ্বনাথ দেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় পুলিশের ইউনিফর্ম।
জেরার মুখে সে স্বীকার করে যে, বাড়ির বউদের সাহায্য নিয়েই সে এই অপরাধ ঘটিয়েছে। তার স্ত্রী মীরা দে ও ভাই শিবুর স্ত্রী লক্ষ্মী দেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় লুট হওয়া ব্যাগ। জেরার মুখে বিশ্বনাথ স্বীকার করেছে যে, পিছনের সিট ফাঁকা এমন কোনও গাড়ি থেকে লুঠপাটের ছক সে কষে। তখনই রবীন্দ্র সরোবরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির গাড়িটি দেখতে পেয়ে তারা দাঁড় করায়। গাড়িতে ওই গ্যাংয়ের আরও এক মহিলা ছিল। তারও সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.