অভিরূপ দাস: মানসিক হাসপাতালের বাসিন্দা। পাড়ার লোক তাদের এড়িয়ে চলেন ‘পাগল’ ভেবে। সেই তাঁরাই তৈরি করলেন আস্ত একটা দশভুজা। একদা মানসিক রোগীদের এহেন শিল্প কীর্তিতে চোখ কপালে উঠেছে অনেকেরই। পাভলভ মানসিক হাসপাতালের চা ঘরের পাশে এই মুহূর্তে সাজ সাজ রব। শ্বেত পদ্মের উপর অধিষ্ঠান করেছেন দশভুজা। থিম কমলে কামিনী। একহাতে ত্রিশুল। তবে মহিষাসুর নেই। দেবী দুর্গার চারপাশে ঝুলছে অগুনতি করোনার (Coronavirus) মডেল। আবাসিকদের কথায়, এই মুহূর্তে এরাই তো অসুর। যাদের জন্য রাস্তাঘাটে শান্তিতে হাঁটাচলা করা যাচ্ছে না।
ফি বছর আবাসিকরা ঠাকুর দেখতে যান। গত বছর করোনার আবহে যেতে পারেনি। এবারও যদি যাওয়া আটকে যায়! সেই চিন্তা থেকেই গৌরীকে পাভলভে আনার চিন্তা। আবাসিক সিদ্ধার্থ শংকর গুহ, টুকাই সাধুখাঁ, দেবাশিস দাস, তপন দাস, প্রদীপ দাস মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এরাই মানসিক হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন গৌরীকে। দশভুজা গড়ার টিমে রয়েছেন আবাসিক তপনবাবু। থাকেন আগরপাড়ায়। বহুকাল ধরে মানসিক হাসপাতালের বাসিন্দা। বাড়িতে দুই ভাই। পুজোয় তাদের হাসপাতালে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তপন।
স্মিত হেসে জানিয়েছেন, “সবাই ভাবে মাথার ঠিক নেই। ওদের দেখাবো কেমন ঠাকুর তৈরি করেছি।” চোখে মুখে তাঁর সারল্যের ঝিলিক। যেমন সারল্য তাঁদের প্রতিমাজুড়ে। হিংসা না পসন্দ। তাই মহিষাসুর তৈরি করেননি আবাসিকরা। বাদামী, সাদা, লাল তিন রঙের মিশেল প্রতিমাজুড়ে। সে রং করেছেন সিদ্ধার্থ। কেন্দ্রীয় সরকারী সংস্থায় চাকরি করতেন তিনি। বছর দশেক আগে বাড়ির লোক তাঁকে রেখে যান পার্ক সার্কাসের পাভলভ মানসিক হাসপাতালে (Pavlov Mental Hospital)। আর নিতে আসেননি। তাতে দুঃখ নেই তাঁর। বরং এখানেই মানিয়ে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, ব্লক প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই প্রতিমাকে। তবে সে কাজ খুব সহজ নয়। চাই দীর্ঘ অনুশীলন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা পাভলভ মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের ব্লক প্রিন্টিংয়ের ট্রেনিং দেন। সে সংস্থার আধিকারিক রত্নাবলী রায়ের আক্ষেপ, এদের তুলির টান নামজাদা কোনও শিল্পীর চেয়ে কম নিঁখুত নয়। কেন যে এদের বড় বড় পুজো কমিটি ডেকে নিয়ে যায় না।
আবাসিকরা জানিয়েছেন, প্রথমে প্যাস্টেল দিয়ে স্কেচ করা হয়েছে। তারপর তুলি আর অ্যাক্রিলিক রঙের পোচ পরেছে দশভুজার গায়ে। পাভলভের দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2021) উদ্বোধন হল শুক্রবার। উপস্থিত ছিলেন পাভলভের সুপার গণেশ প্রসাদ। ডেপুটি ডিরেক্টর হেলথ সার্ভিস। পাভলভের আবাসিকদের ব্লক প্রিন্টিংয়ের ট্রেনিং দেন নব্যেন্দু সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, “আমি ওদের শেখাই শুধু নয়। ওদের কাছ থেকেও আমি অনেক কিছু শিখি। সকলে এদের মানসিক ভারসাম্যহীন ভাবে। শিল্পের কোনও প্রথা হয় না। এক রঙের সঙ্গে আরেক রং মিশিয়ে নতুন যে শিল্প এরা সৃষ্টি করেছেন তা সত্যিই অভিনব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.