কলহার মুখোপাধ্যায়: প্রয়াত ইতিহাসবিদ তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক হরি বাসুদেবন। শনিবার রাত পৌনে একটা নাগাদ সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে ৪ মে ওই হাসপাতালে ভরতি হন CD ব্লকের বাসিন্দা বছর আটষট্টির এই ইতিহাসবিদ। ৬ তারিখ তাঁর সোয়াব টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হয়। তারপর থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া। করোনা যুদ্ধে গতকাল রাতেই হারতে হয় হরি বাসুদেবনকে। তাঁর প্রয়াণের খবরে শোকপ্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
পরিবার সূত্রে খবর, সল্টলেকের CD ব্লকের বাসিন্দা হরি বাসুদেবন মার্চ মাসে চেন্নাই থেকে ফিরেছিলেন। পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। এরপর বাইরে থেকে আসা এক আত্মীয়কে আনতে তিনি দমদম বিমানবন্দরে যান। তা ছাড়া আর এলাকার বাইরে সেভাবে যাতায়াতের কোনও রেকর্ড ছিল না। পার্শ্ববর্তী BD মার্কেটে অবশ্য তিনি প্রায়ই যেতেন। মে মাসের প্রথম থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। ছিল করোনা সংক্রমণের উপসর্গও। ৪ তারিখ হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে তাঁর। তারপর থেকেই ভেন্টিলেশনে ছিলেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, অন্যান্য রোগেও আক্রান্ত ছিলেন হরি বাসুদেবন।
কেমব্রিজ ফেরত এই ইতিহাসবিদের কেরিয়ার বেশ চমকপ্রদ। ভারত ও ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক কাঠামো, রুশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে পড়াশোনার ও গবেষণার পর দেশে ফিরেও কর্মক্ষেত্রে যোগ দেন। সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি নিয়েও তাঁর বিস্তর গবেষণা রয়েছে, যা ইতিহাসের গুরুত্বপূ্র্ণ অবদান হিসেবে স্বীকৃতি। রুশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে তাঁর লেখা দুটি বই উচ্চশিক্ষারত ইতিহাসের পড়ুয়াদের বিশেষ পছন্দের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টটিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ, দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেছেন। রুশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে তাঁর দীর্ঘ গবেষণার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রকের উপদেষ্টা পদেও ছিলেন হরি বাসুদেবন।
ছাত্রছাত্রীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন ইতিহাসের ‘স্যর’। করোনা আক্রান্ত হয়ে তাঁর এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না কেউই। ইতিহাসবিদের পরিবারের ৫ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। যদিও তাঁদের কারও শরীরে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নেই বলেই খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.