Advertisement
Advertisement
Coronavirus

দ্বিতীয়বার করোনার থাবা! কলকাতার একই ওয়ার্ডের ৬ জনের ফের সংক্রমণ বাড়াল উদ্বেগ

স্বাস্থ্যকর্তাদের মাথাব্যথা বাড়াচ্ছে কলকাতা পুরসভার ১০১ নং ওয়ার্ড।

Six people of one ward in Kolkata get corona infected for the second time
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 31, 2020 9:54 am
  • Updated:August 31, 2020 9:56 am  

গৌতম ব্রহ্ম: ২ আগস্ট পজিটিভ, ২১ আগস্ট নেগেটিভ। ফের পজিটিভ ২৮ আগস্ট। সোয়াব টেস্টের রিপোর্টে জ্বলজ্বল করছে তারিখ ও ফলাফল। সাতদিনের ব্যবধানে ফের কোভিড (Coronavirus) সংক্রমিত করোনাজয়ী এক মহিলা। তিনটি রিপোর্টই RT-PCR’এর। প্রত্যেকটি কলকাতার নামী হাসপাতালের ল্যাবরেটরি থেকে করানো। এই মহিলা একা নন। সেরে ওঠার পর এমন আরও পাঁচজনের শরীরে পুনরায় থাবা বসিয়েছে SARS-CoV-2। প্রতিটি রিপোর্টই নামী বেসরকারি ল্যাব বা সরকারি জায়গার। ফলে দুশ্চিন্তার মেঘ জমেছে বিশেষজ্ঞদের মনে।

চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও একটি তথ্য। ছ’জনই কলকাতা পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ছোট পরিসরে এতগুলো পুনঃসংক্রমণের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, ভূ-ভারতে কোথাও হয়েছে বলে রেকর্ড হয়নি। এমনটাই জানালেন ভাইরোলজিস্টরা। তাঁদের বক্তব্য, রিপোর্টে গরমিল বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ, এতগুলো রিপোর্ট ভুল আসা কার্যত অসম্ভব। সুতরাং, ভাল করে ছ’জন রোগীকেই পুনরায় পরীক্ষা করা উচিত। যাচাই করা উচিত সংশ্লিষ্ট RT-PCR যন্ত্র ও তা ব্যবহারের পদ্ধতি। সত্যি হলে, কোভিড নিয়ে বিপদ কিন্তু কয়েকগুণ বেড়ে গেল।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দামবৃদ্ধি? লোকাল ট্রেন চালানো নিয়ে রেল কর্তাদের সুপারিশ]

ছ’টি ঘটনার তিনটিই ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লি এলাকার। ‘সংবাদ প্রতিদিন’এর তরফে প্রত্যেক রোগীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। পাঁচজনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। পুনঃসংক্রমণের ঘটনায় তাঁরা সকলেই হতবাক। তাঁদের বক্তব্য, তাহলে কি করোনা হলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে না? নাকি টেস্টের রিপোর্ট ঠিক নয়? ফের সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি মন থেকে কেউই মেনে নিতে পারছেন না। এই ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, “পুনঃসংক্রমণের ঘটনা নিয়ে আমরা চিন্তিত। এটা টেস্টের গরমিল না অন্য কিছু তা খতিয়ে দেখা উচিত। আমরা ছ’জনকেই পর্যবেক্ষণে রেখেছি। নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছি।”

১৫ আগস্ট কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন করেনাজয়ী সীমা মণ্ডল (নাম পরবির্তিত)। ২০ আগস্ট থেকে ফের জ্বর। সীমাদেবীর পরিবার থেকে স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া টেলিমেডিসিন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তাঁদের পরামর্শেই সীমাদেবীকে ২১ আগস্ট নিয়ে যাওয়া হয় যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কোভিড টেস্ট হয়। ২২ আগস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু ধরা পড়ে ডেঙ্গু। পরে সীমাদেবীকে ডেঙ্গুর চিকিৎসার জন্য মুকুন্দপুরের মেডিকায় স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে ৩০ আগস্ট সোয়াব টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ফলে ফের রোগীকে নিয়ে আসা হয় কেপিসিতে। পরিবারের প্রশ্ন, কার কথা বিশ্বাস করব? কেপিসি না মেডিকা?

বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে রয়েছেন সতেরো বছরের এক কিশোরেরও। তার বাড়িও ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রপল্লিতে। ১৩ আগস্ট বাইপাস লাগোয়া অ্যাপেক্স হাসপাতালে ওই কিশোরের টেস্ট হয়। রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে হোম আইসোলেশনের ব্যবস্থা হয়। ১৪ দিন পর ডাক্তারবাবু ফিট সার্টিফিকেট দেন কিশোরকে। কিন্তু বাড়তি সাবধানতার জন্য নিজে থেকে ফের টেস্ট করায় সে। ফের পজিটিভ হয় রিপোর্ট। ফের কোয়ারেন্টাইনে যেতে হয় কিশোরকে। একজন উপসর্গহীন রোগীর শরীরে এতদিন ধরে করোনা ভাইরাসের থেকে যাওয়াটা অস্বাভাবিক। এটিও কি পুনঃসংক্রমণ? চিকিৎসকদের একাংশ খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন। ভাইরোলজিস্টদের একাংশের বক্তব্য, পুনঃসংক্রমণের প্রমান পেতে গেলে ভাইরাস আইসোলেশন করে তার উপস্থিতি সুনিশ্চিত করতে হবে।

[আরও পড়ুন: করোনার জীবাণু বধ করার যন্ত্র এল কলকাতায়, বিদ্যুৎ খরচ নামমাত্র]

পুনরায় কোভিড আক্রান্ত রবীন্দ্রপল্লির আর এক মহিলা। কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর উনি চাকরিতে যোগ দেন। ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যাল কলেজে অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়। রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু পরে RT-PCR রিপোর্ট পজিটিভ হয়। ফের আইসোলশেন পাঠানো হয় ওই মহিলাকে।

সম্প্রতি পুণের ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি থেকে পুনঃসংক্রমণের সম্ভাবনার বিষয়টি নস্যাৎ করা হয়। বলা হয়, পুনঃসংক্রমণের সপক্ষে কোনও প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু, তারপরই সেই ধারণা নাড়িয়ে দিয়ে হংকং থেকে প্রমাণ-সহ পুনঃসংক্রমণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। সম্প্রতি আমেরিকা, ব্রিটেনেরও কপালে ভাঁজ ফেলেছে পুনঃসংক্রমণ। টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর কোভিড হাসপাতালেও দু’টি পুনঃসংক্রমণের ঘটনা রিপোর্ট হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের একজন সহকারী সুপারও দু’বার করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু একসঙ্গে এতগুলি পুনঃসংক্রমণ এই প্রথম।

আসলে, কোভিডজয়ীদের পুনরায় সংক্রমণ হবে না, এই বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়েই মুর্শিদাবাদ, বীরভূম-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় কোভিড যোদ্ধা ক্লাব তৈরি হয়েছে। বেলেঘাটা আইডি, এম আর বাঙুর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ-সহ বহু কোভিড হাসপাতালে করোনাজয়ীদের কাজে লাগানো হয়েছে। এবার সেই বিশ্বাসের সেতু নড়িয়ে দিল ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ছ’টি পুনঃসংক্রমণের ঘটনা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement