গৌতম ব্রহ্ম: গত তিনদিন ধরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সন্দেশখালির (Sandeshkhali)। সেখানকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান এলাকা ছাড়ার পর থেকেই মহিলারা ঝাঁটা, লাঠি হাতে প্রতিবাদে নেমেছেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরে চাষের জমি ও খাল দখল করে একের পর এক ভেড়ি তৈরি করেছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য শিবপ্রসাদ হাজরা এবং সন্দেশখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল (TMC) অঞ্চল সভাপতি উত্তম সর্দার। জমিতে চাষের পর গ্রামবাসীরা তাঁদের প্রাপ্য পাননি। এতদিন শেখ শাহজাহানের ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি বলেও দাবি গ্রামবাসীদের। শেখ শাহজাহান বেপাত্তা হওয়ার পর বৃহস্পতিবার থেকে তাঁদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। শুক্রবার শিবপ্রসাদ হাজরার তিনটি পোলট্রিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এসবের পর অবশ্য শনিবার নবান্ন থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এডিজি, আইনশৃঙ্খলা (ADG, Law & Order) মনোজ বর্মার দাবি, ”এখন পরিস্থিতি পুরোটাই কন্ট্রোলে।”
এদিকে, সন্দেশখালির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah) চিঠি লিখলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি। চিঠিতে শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দারের নাম উল্লেখ করেছেন সুকান্ত (Sukanta Majumdar)। গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে তদন্তে গিয়ে ইডি যেভাবে হামলার মুখে পড়েছিল, সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে চিঠিতে অভিযোগ সুকান্তর। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে সন্দেশখালির এই পরিস্থিতি নিয়ে হস্তক্ষেপের আবেদনও জানানো হয়েছে। তবে সন্দেশখালি নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, ওখানে সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রেসের প্ররোচনা রয়েছে।
শুক্রবার সন্দেশখালির পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে (Nabanna) বৈঠকে বসে পুলিশ প্রশাসন। তার পর এডিজি, আইনশৃঙ্খলা মনোজ বর্মা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তাঁর বক্তব্য, ”গত দু-তিনদিন ধরে বসিরহাট পুলিশ জেলার সন্দেশখালিতে কিছু ঘটনা ঘটেছে। যারা ভায়োলেন্সের ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজকের ঘটনায় আটজনকে আটক করা হয়েছে। যদি কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে পুলিশকে জানালে সেটা নিয়েও তদন্ত করবে পুলিশ। গত তিনদিন ধরে যে ঘটনা ঘটছে তার সঠিক তদন্ত হবে। ওখানে এখন পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে। এখনকার পরিস্থিতি পুরোটাই কন্ট্রোলে।”
তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। গত ৫ তারিখ ইডির (ED) উপর হামলার ঘটনাকে সেখানকার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ বলে উল্লেখ করেছিলেন শাসকদলের নেতারা। কিন্তু গত তিনদিন ধরে শাহজাহান বিরোধী যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্থানীয় মহিলারা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে, সেসব দেখেও পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
শুক্রবার সন্ধের পর সন্দেশখালিতে যান পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। ধামাখালি থেকে লঞ্চে করে সন্দেশখালি থানার উদ্দেশে রওনা দেন রাজ্য পুলিশের আইজি (প্রশাসন) এস ঝাজারিয়া, ডিজি দক্ষিণবঙ্গ সিদ্ধিনাথ গুপ্তা ও ডিআইজি বারাসত রেঞ্জ সুমিত কুমার-সহ বসিরহাট পুলিশ জেলার আধিকারিকরা।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.