অভিরূপ দাস: আজ স্কুলে কান ধরে ওঠবস করিয়েছে তো? মায়ের প্রশ্নে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় রণিত। এক সময়ের ‘শাস্তি’ এখন সুপার ব্রেন যোগ! কর্পোরাল শাস্তি নিয়ে আর অভিমান নেই অভিভাবকদের। নয়া স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে কান ধরে ওঠবস আদৌও শাস্তিই নয়! বরং নিয়মিত ওঠবস চাঙ্গা রাখবে শরীর। বস্তুত, শহরের তিনটি নামী স্কুলে রীতিমতো শিক্ষক আনিয়ে ওঠবস করানো হয়েছে পড়ুয়াদের!
[হরিদেবপুর কাণ্ডে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে ‘মেডিক্যাল বর্জ্য’]
লরেটো গার্লস, রামমোহন মিশন, বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতী বিদ্যালয়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ুয়াদের ওঠবস করানো হচ্ছে। এমন ছবি দেখে হাততালি দিয়েছেন অভিভাবকরা। চিকিৎসকরাও সম্মতি দিয়েছেন এই ‘সুপার ব্রেন যোগা’কে। বছর দশেক আগেও পড়া না পারলেই ক্লাসে কান ধরে ওঠবস করাতেন শিক্ষক। স্কুলের ‘কর্পোরাল পানিশমেন্ট’ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। পড়ুয়াদের শাস্তি দেওয়ার রেওয়াজে ইতি টানে বেশিরভাগ স্কুলই। কিন্তু, ওঠবস হারিয়ে যাওয়ার পড়ুয়াদের কোনও উপকার হয়নি। শহরের ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসকরা বলছেন, ওঠবস বিদায় নেওয়ায় বাচ্চাদের মধ্যে ওবেসিটি বা স্থুলতা থাবা বসিয়েছে। কান ধরে ওঠবস করলে শাস্তির আড়ালে শরীরের একটা ব্যায়াম হত।
কতটা উপকারী এই ওঠবস? আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের ফিজিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধ্যাপক গৌরগোপাল পোদ্দার জানিয়েছেন, ডন-বৈঠক শরীরের পক্ষে ভীষণ উপকারী। তিনি বলেন, ‘এমনিতে শহরে খেলার মাঠ কমে গিয়েছে। দিনের বেশিরভাগ সময়ে বাড়িতে টিভি দেখেই সময় কাটে বাচ্চাদের। স্কুলে শাস্তির নামে সামান্য যা শরীরের নাড়াচাড়া হত তাও বন্ধ হওয়ার মুখে। স্কুলে স্কুলে নতুন করে ওঠবস শুরু করার একটা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। শরীরের রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করার সবচেয়ে উপযোগী ব্যায়াম এই ওঠবস।‘
[ দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির ধাক্কায় ঘটছে দুর্ঘটনা! সতর্কতামূলক প্রচারে পুলিশ]
এ রাজ্যে পড়ুয়াদের স্কুলের ওঠবস করানো নিয়ে অভিভাবকদের তীব্র আপত্তি থাকে। কিন্তু ওঠবস যে আসলে একটি শাস্তি, তেমনটা কিন্তু মনে করেন না ভিনরাজ্যের বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দারা। যোগা প্রাণিক হিলিং ফাউন্ডেশনের আধিকারিক রমেশ নারায়ণ জানিয়েছেন, ‘দক্ষিণ ভারতে ‘উঠক-বৈঠক’ রীতিমতো জনপ্রিয়। ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়েও ভক্তেরা কান ধরে উঠবস করেন। আমাদের যোগ ব্যায়ামের ক্লাসে এসে অনেক অভিভাবক বলেন, ছেলেমেয়েদের ভাল করে ওঠবস করান। ’ সত্যি কথা বলতে, ওঠবসের ভঙ্গিমাটিও বিজ্ঞানসম্মত। পাঠশালায় ওঠবস করার সময় ডান হাত দিয়ে বাঁ কান আর বাঁ হাত দিয়ে ডান কানের লতি স্পর্শ করতে হয়। কানের লতিতে আঙুলের চাপ আকু প্রেশারের কাজ করে। যা মস্তিষ্কের দু’দিককে সক্রিয় করে তোলে। নিয়মিত ওঠবস স্মৃতিশক্তিও বাড়ায়। বিশ্বখ্যাত যোগা ইনস্ট্রাকটর প্রশান্ত গণপতি জানিয়েছেন, কোনও পড়ুয়া যদি নিয়মিত পাঁচ মিনিট ওঠবস করে, তাহলে আলস্য কেটে যাবে। পরীক্ষায় রেজাল্টও ভাল হবে।
[ মানুষের গড় আয়ু ১৪০! ডাক্তারবাবুদের আশ্বাসে সেঞ্চুরির পথে অন্নপূর্ণা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.