রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: অযোধ্যা আন্দোলনের ‘প্রথম শহিদ’ কলকাতার দুই ভাই রাম ও শরদ কোঠারি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাম মন্দিরের ভূমিপুজো ঘিরে উত্তেজনা চরমে বড়বাজারের কোঠারি বাড়িতে। তাই আমন্ত্রণ পেয়ে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না রাম-শরদের বোন পূর্ণিমা কোঠারি। ৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে শামিল হতে ইতিমধ্যেই অযোধ্যা পৌঁছে গিয়েছেন গিয়েছেন তিনি।
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আবেগ বুজে আসে তাঁর গলা। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে পূর্ণিমা বলেন, “দেখুন রাম মন্দির আন্দোলন আমাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলে বোঝাতে পারব না। দাদাদের মৃত্যুর পর প্রায় ৩০ বছর কেটে গিয়েছে। আজও মনে হয় তাঁরা আসবে, আমার সঙ্গে কথা বলবে। আমাদের ছোটবেলা বিকানেরে কেটেছে। এখনও সেখানে আত্মীয়র থাকেন।” তিনি আরও বলেন, “রাম ভক্তদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে আমি জড়িত। ভূমিপুজোয় আমি যাচ্ছি শুনে তারা সকলেই খুব খুশি হয়েছে। আমার দাদারা বেঁচে থাকলে তারাও নিশ্চয়ই এই অনুষ্ঠানে যেতেন।” রাম মন্দিরে কর সেবার কথা স্মরণ করে তিনি জানান,অযোধ্যা আন্দোলনকে তাঁর বাবাও সমর্থন করতেন। ব্যবসায়ী হওয়ার দরুণ টাকা পয়সা দিয়ে সমস্ত সম্ভব পদক্ষেপ করার পক্ষে ছিলেন তিনি। তবে রাম অযোধ্যা যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। বাবার আপত্তি সত্বেও শরদও অযোধ্যার পথে পাড়ি দিয়েছিলেন। তাঁর মেয়ে যশস্বিনী জানান, পরিবারের তরফে মার সঙ্গে তিনি এসেছেন। সুযোগ পেলে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করবেন তাঁরা।
আজও উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্যা শহর তিন দশক আগের ঘটনার কথা ভুলেনি। ঘিঞ্জি গলি আর জরাজীর্ণ বাড়ি নিয়ে যেন শহরটি যেন এক টুকরো জীবন্ত ইতিহাস। খানিকটা দুলকি চালে চলা শহরটির বাসিন্দাদের তেমন তাড়া নেই। ‘চায় লাও’ বলে বসে পড়লেই হল। এহেন শহরে পা রেখে ‘শহিদ গলি’র ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে, একবাক্যে উত্তর তো পাবেনই, উপরি পাওনা হিসেবে মিলবে গল্পও।ওই একফালি জায়গায় গেলে আজও শুনতে পাবেন ‘বঙ্গাল সে আয়ে থে দো ভাই। রাম আউর শরদ কোঠারি। ইয়াহি গোলি মারি থি পুলিশনে।’
গোটা ঘটনা খোলসা করে বলতে গেলে চলে যেতে হয় ১৯৯০ সালের ২ নভেম্বর। ওই দিনই বাবরি মজসিদ থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে স্থিত হনুমান গড়ি মন্দিরের সামনে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার করসেবক। বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাম রথ যাত্রার আবেদনে সাড়া দিয়ে রাম মন্দির নির্মাণের দাবি জানাতে জড়ো হয়েছিলেন করসেবকরা। তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কলকাতার বড়বাজার এলাকার দুই ভাই- রাম ও শরদ কোঠারি। তারপরই সেই এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। জানা যায়, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের নির্দেশ ছিল যে কোনও মূল্যে যেন করসেবকদের আটকানো হয়। প্রয়োজনে গুলিও চালানোর নির্দেশ ছিল পুলিশকর্মীদের উপর। এদিকে, বাবরি মসজিদের দিকে ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছিলেন করসেবকরা। পুলিশ বাধা দিলে রাস্তায় বসে ভজন শুরু করেন তাঁরা। অভিযোগ, জায়গা ছাড়তে রাজি না হওয়ায় নির্বিচারে করসেবকদের উপর গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশবাহিনী। ওই ঘটনায় ১৬ করসেবক-সহ মৃত্যু হয় কোঠারি ভাইদেরও। বাকিটা ইতিহাস। রাম মন্দিরের জন্য প্রথম রক্ত দেয় বাংলার দুই সন্তান। তাঁদের সম্মানে ওই গলির নাম রাখা হয় শহিদ গলি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.