Advertisement
Advertisement
Panskura Classical Singer

নেই টাকা, ফিজের বদলে গান শুনিয়েই ডাক্তারের পারিশ্রমিক দিলেন দুস্থ শিল্পী

জটিল রোগে আক্রান্ত তিনি।

Having no money, artist of Panskura paid doctor's remuneration by listening him music | Sangbad Pratidin
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:November 26, 2021 7:54 pm
  • Updated:November 26, 2021 8:33 pm  

অভিরূপ দাস: “যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই, কেন মনে রাখো তারে”— গাইছেন শিল্পী। দর্শকদের মন জয় করতে নয়। অন্য কারণে। চিকিৎসকের ‘ভিজিট’ দেওয়ার টাকা নেই। তাই গান গেয়েই পুষিয়ে দিলেন খেয়াল, ঠুমরির জাদুকর পণ্ডিত দীননাথ মিশ্রর সুযোগ্য ছাত্র অরূপকুমার মণ্ডল। এভাবেই দিলেন ডাক্তারের ফিজ। 

পাঁশকুড়ার অরূপকুমার মণ্ডল (৫৯) নামজাদা ধ্রুপদী সংগীতশিল্পী । এমন শীতের মরশুমে জলসার ঠ্যালায় যাঁর ‘ডেট’ ফাঁকা পাওয়া যেত না, সেই শিল্পীই এখন নিঃস্ব, কপর্দকশূন্য। সিজোফ্রেনিয়ায় (Schizophrenia) আক্রান্ত। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অলোক পাত্রকে দেখান অরূপবাবু। অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে চিকিৎসকের ‘ভিজিট’ দেওয়ার টাকা নেই তাঁর কাছে। তাহলে উপায়? উপায় অরূপবাবুই বাতলে দেন। বলেন, “আমি গান শুনিয়ে ভিজিটের টাকা শোধ করব। ” বাঁধা দেননি চিকিৎসক। মুহূর্তে চিকিৎসকের চেম্বারে বদলে যায় সুরেলা বৈঠকে।

Advertisement

Panskura singer

[আরও পড়ুন: স্কুল খুলতেই শৃঙ্খলাভঙ্গের নজির, ক্লাসে হিন্দি গানের তালে উদ্দাম নাচের ভিডিও ভাইরাল]

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অলোক পাত্রর কথায়, “এ রাজ্যের ১০০ জন মনোরোগীর মধ্যে দু’জন সিজোফ্রেনিয়ায় শিকার। মুশকিল হল এই রোগ নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই অধিকাংশ মানুষের। এমনকী মনোরোগের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়াকে আলাদা করে চিহ্নিত করাও রীতিমতো কঠিন কাজ।

কী লক্ষণ এই রোগের?

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কাল্পনিক দৃশ্য দেখা বা আওয়াজ শুনতে পাওয়া বা মনে অদ্ভূত ধারণা জন্মে যাওয়া এই রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। ভ্রমকে সত্যি মনে হয়। এ ছাড়া অযৌক্তিক এবং অস্বাভাবিক চিন্তাভাবনা ও কথাবার্তা, সন্দেহপ্রবণ মন, কাজে মনোযোগ দিতে না পারা, লোকসঙ্গ এড়িয়ে চলার মতো কাজ করে থাকেন আক্রান্তরা। রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে বা সঠিক সময় চিকিৎসা না শুরু হলে আক্রান্ত ব্যক্তি ক্রমশ অদ্ভূত এক দুনিয়ায় হারিয়ে যান। এই রোগ মূলত জিনঘটিত। সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ভয় কাজ করে। তবে বুদ্ধিমত্তা বা ইন্টেলিজেন্সে কোনও ক্ষতি হয় না। তাই এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সঠিক সময়ে শুরু হলে তিনি যে পেশাতেই থাকুন, কাজ করে যেতে তেমন সমস্যা হয় না। তবে অরূপবাবুর ক্ষেত্রে সেটাও সমস্যা।

Classical Singer

পরিবার তো বটেই পাড়া প্রতিবেশীদের উপহাসের পাত্র শিল্পী অরূপকুমার মণ্ডল। আড়ালে আবডালে লোকে তাঁকে ‘পাগল’ বলে ক্ষ্যাপায়। গানের অনুষ্ঠানে কেউ ডাকে না। অগুনতি ছাত্র-ছাত্রীদের গান শেখাতেন তিনি। সকলেই আসা বন্ধ করেছে। অভিযোগ, তাঁর রেওয়াজে ঘুমের অসুবিধা হচ্ছে বলে হারমোনিয়াম, সেতার ঘরে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করেছে বাড়ির লোকেরাই। ডা. অলোক পাত্রর কথায়, “সংগীতই পারে শিল্পীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে। আমি তো আমার মতো কাউন্সিলিং করছি। এই অসুখে কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি সামাজিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।”

এই সহযোগিতা তিন ধরনের। প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, টার্শিয়ারি। প্রাইমারি সাপোর্ট বাড়ি থেকে মিললেও সেকেন্ডারি সাপোর্ট মেলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে। কিন্তু এখানে সেটাও মিলছে না। ফলে টার্শিয়ারি অর্থাৎ কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনই এখন অরূপবাবুর ভরসা। চিকিৎসকের প্রশ্ন, “পাড়ার মানুষ স্বাভাবিকভাবে কথা বলেন না ওঁর সঙ্গে। যাতায়াতের পথে সবসময় কেউ যদি তাঁকে পাগল বলে, রেওয়াজ করে আটকে দেয় তাহলে কীভাবে উনি সুস্থ হবেন?” ডা. অলোক পাত্রর মতে, ” মানসিক রোগীদের থেকে তাঁরাই বেশি অসুস্থ যাঁরা বিবেক মানবিকতা ত্যাগ করে একজন শিল্পীর সত্ত্বাকে হত্যা করছেন।”

Singer

[আরও পড়ুন: Antim Review: সলমন ম্যাজিক কি ‘অন্তিম: দ্য ফাইনাল ট্রুথ’ ছবিকে উতরে দিতে পারল?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement