অর্ণব আইচ: বিস্ফোরক পাচার চক্রের নাটের গুরু বালেশ্বরের সাহুবাবু। লোকে তাকে চেনে ‘সাহুবাবু’ নামেই। আসল নাম সুকান্ত সাহু। ওড়িশার এই ব্যক্তির কাছ থেকেই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পটাশিয়াম নাইট্রেট জোগাড় করেছিল উত্তর ২৪ পরগনার রবিউল ইসলাম। সোমবার বিকেলে ওড়িশার বালেশ্বর ও বারিপদায় তল্লাশি চালিয়ে সুকান্ত সাহুকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।
সাহুকে জেরা করে পূর্ব মেদিনীপুরের এক এজেন্টের সন্ধান চালাচ্ছে এসটিএফ। সাহু ও রবিউলের যোগাযোগ করিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের ওই এজেন্ট। তার মাধ্যমেই ওই বিস্ফোরক বাবদ সুকান্ত সাহুকে তিন লাখ টাকা দিয়েছিল রবিউল। এদিন সাহুকে গ্রেফতার করার পর তাকে বারিপদা আদালতে তোলেন গোয়েন্দারা। তাকে নিয়ে আসা হয়েছে কলকাতায়। জেরার মুখে সুকান্ত সাহু স্বীকার করেছে যে, কোনও বিস্ফোরক বিক্রির লাইসেন্স নেই তার কাছে। অথচ তার সংস্থা ‘সাই ট্রেডার্স’—এর মাধ্যমে সে এর আগেও পাচার করেছে এই ধরনের বিভিন্ন রকমের বিস্ফোরক। কোনও নথিপত্র ছাড়াই বেআইনিভাবে ওড়িশার কয়েকটি রাসায়নিক কারখানা থেকে পটাশিয়াম নাইট্রেট জোগাড় করে সে। জমা করে বালেশ্বরের গুদামে। সেখান থেকেই মালবাহী গাড়ি করে পাচার করে উত্তর ২৪ পরগনায়। মূলত উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি-সহ বেশ কয়েক জায়গায় অবৈধ বাজির কারখানায় এই পটাশিয়াম নাইট্রেট পাচার করা হত বলে খবর পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
একইসঙ্গে ভোটের আগে পটাশিয়াম নাইট্রেটের কালোবাজারি নিয়েও গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেছেন। অবৈধ বাজির কারখানার আড়ালে এই বিস্ফোরক দিয়ে বোমা তৈরির ছক কষা হয়েছিল কি না, তা গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছেন। কারণ, এই বিশেষ রাসায়নিক গন্ধক ও কাঠকয়লার সঙ্গে মিশিয়ে বারুদ তৈরি হয়। তা দিয়ে যেমন অবৈধ বাজি তৈরি হয়, তেমন জঙ্গি বা মাওবাদীদের হাতে এই বারুদ বা রাসায়নিক পড়লেও তার ফল হতে পারে মারাত্মক। তাই কলকাতা থেকে পটাশিয়াম নাইট্রেট উদ্ধারের সঙ্গে জঙ্গিযোগের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি মানছে না তৃণমূল, কমিশনের কাছে নালিশ বিজেপির
গত শুক্রবার গভীর রাতে উত্তর কলকাতার চিৎপুরের বি টি রোডে একটি মালবাহী গাড়িকে দাঁড় করান এসটিএফ আধিকারিকরা। সেই গাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার হয় ২৭ বস্তা পটাশিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরক। হাজার কিলোরও বেশি পরিমাণ ওই বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। গাড়ির চালক ও খালাসিকে জেরা করে চক্রের এক মাথা উত্তর ২৪ পরগনার মালিকাপুরের বাসিন্দা রবিউল ইসলামকে গোয়েন্দারা গ্রেফতার করেন। পুলিশের দাবি, রবিউল নিজেও বাজির কারবারের সঙ্গে জড়িত। তাই অবৈধ বাজির কারখানায় পাচার হত ওই পটাশিয়াম নাইট্রেট। গোয়েন্দারা জেনেছেন, উত্তর ২৪ পরগনায় রবিউলের প্রচুর এজেন্ট ছিল। তারা নৈহাটি ও অন্য কয়েকটি জায়গায় অবৈধ বাজির কারখানায় ওই রাসায়নিক পাচার করত। ওই কারখানাগুলিতে পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কিছু কারিগর এসে বাজি তৈরি করত। পূর্ব মেদিনীপুরের সেই বিশেষ এজেন্ট ওই কারিগরদের সরবরাহ করত কি না, গোয়েন্দারা তা জানার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে রাজ্যের বেশ কয়েকটি অবৈধ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এর পরই বিভিন্ন সময় বাজির কারখানার আড়ালে বোমা তৈরির ছক প্রকাশ পেয়েছে। ভোটের আগে এই পদ্ধতিতে বোমা তৈরি হচ্ছিল কি না, তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.