রাহুল চক্রবর্তী: প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত হার সোমেনপুত্র রোহন মিত্রর। জয়ী হলেন অধীর গোষ্ঠীর প্রার্থী শাদাব খান। প্রায় দু’হাজার ভোটে রোহন মিত্রকে হারিয়ে দিয়ে প্রদেশ যুব কংগ্রেসের নয়া সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন শাদাব খান। সাদাবের জয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে ফের একবার অধীর চৌধুরির প্রভাব মজবুত হল মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেইসঙ্গে মুখ পুড়ল অধীরের জায়গায় নয়া প্রদেশ সভাপতি মনোনিত হওয়া সোমেন মিত্রের। কারণ, যুব নেতৃত্বের রাশ এখন অধীরের হাতেই থাকল বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত।
[‘লাল ফেট্টি খুলে গেরুয়া ফেট্টি পরে তাণ্ডব চালাচ্ছে ওঁরা’, জঙ্গলমহলে বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী]
গত দুদিন ধরে রাজ্যের সমস্ত জেলায় দলীয় স্তরে যুব কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ হয়। তিনটি স্তরে ভোটগ্রহণ হয়, বিধানসভা, জেলা স্তর এবং প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিতে। বুধবার সকাল আটটা থেকে বিধান ভবনে ভোটগণনাকে ঘিরে ছিল কড়া নিরাপত্তা। পাঁচ বছর আগে নজরুল মঞ্চে যুবর সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক গন্ডগোল হয়েছিল। গুলি চালনার মতো ঘটনার সাক্ষী থেকেছিলেন প্রদেশ নেতারা। সেবার অরিন্দম ভট্টাচার্যকে হারিয়ে সাংসদ মৌসম বেনজির নুর সভানেত্রী নির্বাচিত হন। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল বিধান ভবন চত্বরে। কোনও বিধায়ক, প্রদেশ কংগ্রেস নেতাকে গণনা চলাকালীন ভিতরে ঢুকতে দেওয়ায় কড়াকড়ি ছিল। এক বিধায়ককে তো নিজের পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভিতরে ঢোকার অনুমতি নিতে হয়। দিল্লি থেকে এআইসিসি-র সদস্যরা এসে ভোটগণনা করেন। গণনার পর দেখা যায়, শাদাব খান পেয়েছেন ৯১৯৫ ভোট এবং রোহন মিত্র পেয়েছেন ৭২৬৯টি ভোট। প্রায় দু’হাজার ভোটে জিতে নয়া যুব সভাপতি নির্বাচিত হন শাদাব খান। পরাজয়ের রোহন মিত্রের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
[কলকাতা পুরসভার মেয়র পদে মীনাদেবী পুরোহিতকে প্রার্থী করল বিজেপি]
এই জয়কে অধীরের জয় হিসাবেই দেখছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এর আগে ছাত্র পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সৌরভ প্রসাদ। তিনিও অধীর ঘনিষ্ঠ বলে সুবিদিত। এবার যুবর দায়িত্বেও অধীর ঘনিষ্ঠ নির্বাচিত হওয়ায় স্বভাবতই দলের অন্দরে কিছুটা চাপে পড়লেন সোমেন মিত্র। প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব সামলাতে গেলে ছাত্র-যুবর সহযোগিতা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে অধীর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে মতপার্থক্য হবে, এমনটাই আশঙ্কা প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশের। উল্লেখ্য, সভাপতি পদ থেকে অপসারিত হলেও প্রদেশ কংগ্রেসে নিজের সমান্তরাল প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন অধীর। কলকাতাতে একটি অফিস নিয়ে সেখানেই অনুগামীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের কর্মসূচির বাইরেও দলের বিভিন্ন নেতাদের বিশেষ করে নিজের অনুগামীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন বহরমপুরের সাংসদ। তবে কি সোমেন মিত্রের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই চলছে অধীর গোষ্ঠীর? আর যদি তা হয়েই থাকে তবে তা লোকসভা নির্বাচনের আগে এ রাজ্যে প্রদেশ কংগ্রেসের জন্য কতটা স্বাস্থ্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, বঙ্গ বিজেপি যেভাবে এ রাজ্যে সবকিছুতে ঝাঁপিয়ে আন্দোলন করছে সে পথ থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে প্রদেশ নেতৃত্ব। খোদ সোমেন মিত্র সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা দিলেও তা কতটা ফলপ্রসু হবে তা এদিনের যুব সভাপতি নির্বাচনের ফলাফলে প্রশ্নের মুখে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.