সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের অভিজ্ঞতার উপর অগাধ আস্থা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM । তাঁর উন্নয়ন যজ্ঞকে দক্ষতার সঙ্গে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেন এই কর্তারাই। বিচক্ষণতার সঙ্গে তাঁর নির্দেশ পালন করেন এই আমলারা। তাই অবসর গ্রহণের পরও ‘ছুটি’ পান না অনেকে। বরং অবসরের পর তাঁদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয় আরও গুরু দায়িত্ব।
দিন কয়েক আগেই মুখ্যসচিব পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি একা নন, এ রাজ্যে অবসর নেওয়ার পরও নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন একাধিক আধিকারিক। বাংলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত আমলারা। যাঁরা কর্মজীবনের শেষের পরও রাজ্য সরকারের উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হয়েছেন। এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা, প্রধান সচিব-সহ একাধিক পদে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত অথচ অভিজ্ঞ, দক্ষ ও কর্তব্য পরায়ণ আমলারাই।
অবসরের পরও রাজ্য প্রশাসনে নতুন ইনিংস শুরু করা কয়েকজন
আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়: ৩১ মে অবসর নেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব। সেই দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, ১ জুন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা পদে নতুন ইনিংস শুরু করবেন আলাপন। অর্থাৎ অল ইন্ডিয়া সিভিল সার্ভিস থেকে অব্যাহতি নিলেও বাংলার প্রশাসনিক ক্ষমতার অলিন্দেই থাকবেন তিনি। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে হাজির থাকছেন প্রাক্তন মুখ্যসচিব। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা থাকছে তাঁর।
গৌতম সান্যাল: বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব। ২০১১ সালে তাঁর সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট সার্ভিসের মেয়াদ শেষ হয়। তার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ওয়াকিবহাল মহলের কথায়, রাজ্য প্রশাসনের ক্ষমতার ‘নিউক্লিয়াসে’ রয়েছেন গৌতমবাবু। তাঁদের কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর সেক্রেটারিয়েটের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী পদে রয়েছেন তিনি।
রাজীব সিনহা: ২০২০ সালে সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখ রাজ্য মুখ্যসচিবের পদ ছাড়েন তিনি। তার পর দিনই তাঁকে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদ ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়্যারম্যান পদে নিযুক্ত হন তিনি। যার মেয়াদ ৩ বছর। রাজ্যের নতুন শিল্পক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেওয়ার দায়িত্ব সামলান রাজীববাবু।
সুরজিৎ পুরকায়স্থ: ২০১৮ সালে রাজ্য পুলিশের ডিজির পদ থেকে অবসরের পরই রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে বহাল হন তিনি। বস্তুত, সুরজিৎবাবুকে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত রাখতে এই নতুন পদটি তৈরি করে রাজ্য সরকার। তবে একুশের ভোটের আগে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরেই সুরজিৎবাবুকে ফের নতুন পদ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের অধীনে তৈরি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সিভিল সার্ভিস অ্যাকাডেমির প্রধান করা হয়েছে তাঁকে।
রিনা মিত্র: ২০১৯ সালে ভারত সরকারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের বিশেষ সচিব হিসেবে অবসর নেন তিনি। এরপরই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী নিজের সেক্রেটারিয়েটের প্রধান সচিব (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা) পদে নিয়োগ করেন। পরে অবশ্য রাজ্যের মুখ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টার ডেপুটি হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার পর তাঁকে রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখার ওএসডি বা অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি বা ওএসডি করা হয়।
কিন্তু কেন এই পথে হাঁটেন মুখ্যমন্ত্রী? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, অভিজ্ঞতায় ভরসা রাখতে ভালবাসেন মমতা। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে গৌতম সান্যাল, সুরজিৎ পুরকায়স্থ থেকে রিনা মিত্র, সকলেই যথেষ্ট অভিজ্ঞ। দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজের ‘নির্ভরযোগ্য’ টিম ভাঙা একেবারে না-পসন্দ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময় পদ ছাড়তেই হয়। কিন্তু তাঁদের হারাতে চান না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাই অবসরের পর সেই সমস্ত দক্ষ আধিকারিকদের বিশেষ পদে বহাল করে দেন মমতা। উল্লেখ্য, বুধবারের প্রশাসনিক বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “যশ মোকাবিলায় যেসমস্ত ইঞ্জিনিয়াররা ভাল কাজ করবেন, তাঁদের আমি ছাড়ব না। রেখে দেব।” তাই হয়তো প্রশাসনিক মহল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ব্যক্তিরা বলে থাকেন, “মমতার ভরসাযোগ্য আধিকারিকরা কখনওই অবসর নেন না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.