ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: অবশেষে খুঁটিপুজো সম্পন্ন হল কালীঘাট সংঘশ্রী দুর্গাপুজো কমিটির। বেশ কয়েকদিনের রাজনৈতিক চাপানউতোর, খবরের শিরোনামে আসা, পুজোয় গৈরিকিকরণের জল্পনার মেঘ সরিয়ে খুঁটিপুজো করে দুর্গাপুজোর নান্দীমুখ করল সংঘশ্রী। আগেই পুজো বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে। রবিবার রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ মালা রায়, মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার ও পুজোর উপদেষ্টা মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। রীতি মেনে খুঁটিপুজো সম্পন্ন হতেই সংঘশ্রী ‘রাহুমুক্ত’ হল বলে মত পুজোকমিটির একাংশের। পুজো বিজেপির দখলমুক্ত হল কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে কার্তিকবাবুর বলেন, ‘যারা এটা করেছিল তারা বোকামি করেছিল। এলাকার পুজো এলাকার মানুষ ছাড়া হতে পারে না। রাজনীতির আগে এলাকার মানুষ।’
সংঘশ্রীর পুজোয় রাজনীতির মেঘ ঘনায় কিছুদিন আগে। আচমকা খবরের শিরোনামে উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ার পুজো। পুজোকমিটির তরফে এবছর সভাপতি হিসাবে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুর নাম ঘোষণা করা হয়। পুজোর উদ্বোধনেও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে আনার কথা রটে সর্বত্র। তাতেই বাধে গোল। তড়িঘড়ি ক্লাবের সভাপতি শিবশংকর চট্টোপাধ্যায় বৈঠক ডাকেন পুজোকমিটির। তাঁকে এবং পুজোকমিটির একাংশকে অন্ধকারে রেখে কীভাবে সায়ন্তন বসুকে সভাপতি করা হল সেই বিষয়ে হেস্তনেস্ত করতেই বৈঠক ডাকেন তিনি। পুজোর অন্যতম উপদেষ্টা মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। এপ্রসঙ্গে কার্তিকবাবু তখন বলেন, ‘এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ছোট, হয়তো মিনি স্কার্ট পরতেন, তখন থেকে সংঘশ্রীর ঠাকুর দেখতে আসেন। এখানে সব ধর্ম, সব বর্ণের মানুষ আছেন। এখানে আমি বহু দিন আছি। সংঘশ্রী ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। এখানে রাজনীতি ঢোকানো মুশকিল। কিন্তু এই যে বার বার রাজনীতি আনার চেষ্টা হচ্ছে, এটা এলাকার মানুষ মেনে নেবে না।’ পুরনো কমিটিই যে এ বারের পুজো পরিচালনা করছে তা-ও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই।
বিতর্ক তৈরি হওয়ায় সেইসময় পিছিয়ে দেওয়া হয় খুঁটিপুজো। গত রবিবার জল্পনার অবসান ঘটায় কালীঘাট সংঘশ্রী পুজোকমিটি। মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার পুজোয় ফিতে কেটে উদ্বোধন করবেন না বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। এমনকী পুজোকে রাজনীতিমুক্ত রাখার কথাই জানিয়ে দেয় পুজোকমিটি। সাফ জানায়, পুজোয় বিজেপির কোনও সাহায্য নেওয়া হবে না। গত কয়েকদিন ধরে শহরের পুজোমহলে যে শোরগোল পড়েছিল, তাতে ইতি টানে সংঘশ্রী। পুজোকমিটির বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, পুজোয় বিজেপির কোনও সাহায্য নেওয়া বা নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। যার ফলে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুরও আর পুজোকমিটির সভাপতি হওয়ার বিষয়ে জল ঢেলে দেয় পুজোকমিটি। উল্লেখ্য, গতবছরও কালীঘাট সংঘশ্রী ক্লাবের পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শেষপর্যন্ত বিতর্ক দূরে ঠেলে পুজো কার্যত নিজেদের দখলেই রাখল তৃণমূল, তা বলাই যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.