সুদীপ রায়চৌধুরী: প্রতিপক্ষ সুযোগ পেলেই খোঁচা দেয় – ‘শূন্য থেকে মহাশূন্যের দিকে ধাবমান’। তাতেও যে অবশ্য চৈতন্য ফেরার চিহ্ন নেই বঙ্গজ সিপিএমের, তা আরেকবার প্রমাণ করে দিল রবিবারের ব্রিগেড। দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হয়ে বক্তাদের তালিকা থেকে ছিটকে গেলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়! দলীয় সূত্রে খবর, কর্মী-সমর্থকদের দাবিতে তালিকায় জায়গা দিতে বাধ্য হলেও শেষ মুহূর্তে কেটে দেওয়া হয়েছে বাম জনতার ‘ক্যাপটেন’ মীনাক্ষীর নাম। যা নিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে একপ্রস্ত কথা কাটাকাটিও হয়েছে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতার।
আগামী ২০ মে সর্বভারতীয় ধর্মঘটের আগে কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় নামাতে রবি দুপুরে শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর এবং বসতি – চারটি গণসংগঠনের নামে ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু সংগঠনের বর্তমান যা হাল, তাতে এই খর বৈশাখের বামেদের ফাঁকা ব্রিগেডের একাংশ। রবিবার, কড়া রোদে সেই ব্রিগেড ভরানো যাবে কিনা, তা নিয়ে আলিমুদ্দিনের চিন্তা ছিল। তারপরই ঝুঁকি না নিয়ে বর্তমান বাম তরুণ ও যুব সমাজের অবিসংবাদী ‘ক্যাপটেন’ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নাম ঢোকানো হয়েছিল বক্তাদের তালিকায়। মীনাক্ষী সংশয়াতীতভাবে বর্তমান বঙ্গ সিপিএমের অন্যতম সেরা বক্তা। মেঠো বাচনভঙ্গিতে তাঁর ভাষণ ইতিমধ্যেই প্রবল জনপ্রিয়ও।
পাশাপাশি অতি সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁর জায়গা করে নেওয়া বাম সমর্থক, বিশেষত ছাত্র ও যুব কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছে। ব্রিগেড সমাবেশে মীনাক্ষীর বক্তব্য রাখার বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে ছাত্র ও যুবদের দলে দলে এসে মাঠ ভরানোর ডাকও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের আয়োজনে মীনাক্ষী এসে হাততালি কুড়িয়ে নিয়ে যাবেন, তা প্রথম থেকেই ঠিক পছন্দ ছিল না সিটু, কৃষক সভা বা বসতি ফেডারেশনের বৃদ্ধ নেতাদের। সূত্রের খবর, বৃদ্ধতন্ত্রের সেই অপছন্দে ‘আপত্তি’ ছিল না আলিমুদ্দিনের একটা বড় অংশেরই। রাজনীতির সেই শুভঙ্করী গণিতের জটিল অঙ্কেই শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ে যান মীনাক্ষী।
ফলে ব্রিগেডের মঞ্চে মহম্মদ সেলিমই হয়ে দাঁড়ান একমাত্র তারকা বক্তা। তাঁর বক্তৃতার অভিমুখ ছিল ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের দিকে। তাই ওয়াকফ বিল বা মুর্শিদাবাদ, মালদহের সাম্প্রতিক অশান্তি – সবেতেই আক্রমণ শানিয়েছেন দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপিকে এক বন্ধনীতে রেখে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েকে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক দিয়ে তিনি বলেন, “তৃণমূল-বিজেপির হাতে বাংলার সর্বনাশ হতে দেব না।”
মীনাক্ষীর শূন্যস্থানে এদিন পূরণ করানো হয় হুগলির গুড়াপের বাসিন্দা খেতমজুর সংগঠনের রাজ্য নেত্রী বন্যা টুডুকে। মীনাক্ষীর মতো আঞ্চলিক ভাষায় ‘২৬-এর বিধানসভা ভোটে বাংলায় ‘উইকেট ফেলার’ হাঁক পেড়েছেন তিনি। ঝাঁজাল বাচনভঙ্গিতে বন্যা টুডু বলেন, “খেতমজুর, খেটে খাওয়া মানুষদের লড়াই এটা। শহরের মানুষ আমাদের কথা জানে না। আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। লড়াইয়ের পথ থেকে সরব না। আমাদের সরকার ১০০ দিনের কাজ চালু করার কথা বলেছিল। সবাই বলে, ব্রিগেডে এত লোক, কিন্তু ভোটবাক্স খালি। মানুষের রুটিরুজি আর ভোটবাক্স আলাদা। ১০০ দিনের কাজ আমরা ২০০ দিন করতে চাই। টাকা দাও, না হলে কাজ দাও। এত চুরি করেছে এত চুরি করেছে, দিদি কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। আগামী দিনে আমাদের অনেক কাজ। যে লক্ষ্মীদের সম্মান থাকে না, তাদের আর ভাণ্ডার কী? মেয়েদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, টাকা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওঁরা বলছেন, খেলা হবে। খেলা আমরাও করব। ব্যাট হাতে, বল হাতে ‘২৬-এ আমরাও দেখিয়ে দেব। আমরা উইকেট ফেলব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.