ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: সুসময়ের জমানো বীর্য (Sperm)। ব্যবহার করা যাবে দুঃসময়ে। এ যেন চাকরির প্রথম জীবনে ব্যাঙ্কে টাকা জমানোর মতো। নৈহাটির বাসিন্দা বছর বত্রিশের সুজন নস্কর বিয়ে করেছেন সদ্য। অন্তর্বাস বদলাতে গিয়ে একদিন টের পান, বাঁ দিকের অণ্ডকোষটা যেন আকারে একটু বড়। প্রথমটায় গা করেননি। কিন্তু যত দিন যেতে থাকে তা অবশ হয়ে আসছিল। লজ্জায় নতুন বউকে বলতে পারেননি সে কথা। নিজেই চলে আসেন অ্যাপোলো হাসপাতালের অঙ্কোলজির বহির্বিভাগে।
অঙ্কোলজি বিভাগের শল্যচিকিৎসক ডা. শুভদীপ চক্রবর্তী সুজনকে পরীক্ষা করে বলেন, এটা টেস্টিকুলার নিওপ্লাজম। অণ্ডকোষের বিরল ক্যানসার। দ্রুত অস্ত্রোপচার না করলেই বিপদ। অস্ত্রোপচারের কথা শুনেই আঁতকে ওঠেন সুজন। তাঁর বিয়ে হয়েছে সদ্য। সন্তানের বড় শখ। এহেন ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পর স্পার্ম কাউন্ট কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নব্বই শতাংশ। তা না হলেও রেডিওথেরাপিতে স্পার্মের সমস্যার কারণে সন্তানের জেনেটিক ডিজঅর্ডার দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা নিতে চান সুজন।
চিকিৎসকরা বলেন, তাহলে কমবেশি এক বছর সময় লাগবে। অতদিন পর আরও মারাত্মক হয়ে যেতে পারে ক্যানসারটা। তবে উপায়? ডা. শুভদীপ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ‘‘উপায় ছিল একটাই। অ্যাপোলো ফার্টিলিটি ক্লিনিকের বীর্য ব্যাঙ্কে স্পার্ম রেখে অস্ত্রোপচার করা। তাহলে ক্যানসারকেও বধ করা যাবে। আবার পাওয়া যাবে নিজের ঔরসজাত সন্তান। প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান সুজন। সেইমতো অ্যাপোলো ফার্টিলিটি ক্লিনিকে তাঁর স্পার্মের নমুনা ধরে রাখা হয়েছে। ফার্টিলিটি ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. অরিন্দম রথ জানিয়েছেন, অনেক সময় একটা স্যাম্পেল কাজ নাও করতে পারে। সুজনবাবুর স্পার্মের তিনটি নমুনা আমরা রেখে দিয়েছি। লিকুইড নাইট্রোজেন দিয়ে অত্যন্ত ঠান্ডায় সেগুলো সংরক্ষণ করা আছে। উনি অস্ত্রোপচার করেছেন। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে নিন। তারপর ওই স্পার্ম ওঁর স্ত্রীর ওভারিতে ইঞ্জেক্ট করা হবে।’’
অতদিন ঠিক থাকবে ওই স্পার্ম? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যেভাবে ক্রায়ো প্রিজার্ভড পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে তাতে টানা ৫ বছর তাজা থেকে যাবে ওই শুক্রাণুগুলি। ক্যানসারের অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ হয়েছে সুজনবাবুর। টানা দেড় ঘণ্টার সেই অস্ত্রোপচার হয়েছে শুভদীপ চক্রবর্তী এবং ডা. তাপস করের তত্ত্বাবধানে।
ডা. চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ইংগুইনাল অর্কিয়েকটমি নামক এ অস্ত্রোপচারে ক্ষতিগ্রস্ত অণ্ডকোষ আর স্পার্মেটিক কর্ড বাদ দেওয়া হয়েছে। ক্যানসারের কোষ শরীরের আর কোথাও নেই তাও নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। দীর্ঘ পড়াশোনার পর চিকিৎসকরা বুঝতে পেরেছেন, সুজনবাবুর বাঁ দিকের অণ্ডকোষে সেমিনোমা হয়েছিল। আদতে যা একটি ব্যথাহীন টিউমার। সে কারণেই ফুলে গিয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই রেডিয়েশন আর কেমোথেরাপি শুরু হবে সুজনবাবুর। তাতে বিন্দুমাত্র ভয় পাচ্ছেন না তিনি। তাঁর কথায়, “শুনেছি এসবের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যাই হয়ে যাক, ব্যাঙ্কে আমার রাখা স্পার্ম থেকেই তো সন্তান হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.