Advertisement
Advertisement
কলকাতা ভূকম্প

যে কোনও মুহূর্তে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠতে পারে কলকাতা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

শহরের কোন প্রান্তে ভয় সবথেকে বেশি?

Seismic activity predicted, earthquake may hit Kolkata

ছবি: প্রতীকী

Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:July 30, 2019 8:48 am
  • Updated:July 30, 2019 8:52 am  

রিংকি দাস ভট্টাচার্য: যে কোনও সময় কেঁপে উঠতে পারে পায়ের নীচের মাটি। চোখের সামনে হুড়মুড় করে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারে বহুতল। এক মুহূর্তে দাঁড়ি পড়ে যেতে পারে বহু জীবনে।

রবিবারের ভূমিকম্প হয়েছে দক্ষিণ পুরুলিয়া সিওয়ার জোনে। এ দিন পুরুলিয়া থেকে ১০ কিলোমিটার নীচে এই কম্পনের কেন্দ্র ছিল।

Advertisement

কোনও হলিউডি সিনেমার চিত্রনাট্য নয়। অদূর ভবিষ্যতে এমন বাস্তবের সম্মুখীন হতে পারেন খাস কলকাতার অধিবাসীরা। রবিবার ভোররাতে পুরুলিয়া এবং তার আগে কখনও বাঁকুড়া, কখনও অসম-অরুণাচল প্রদেশের ভূমিকম্পের প্রেক্ষাপটে এমনই অশনি সংকেত দেখছেন ভূবিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ, বারবার এই ছোট কম্পনগুলোও ইওসিন রেঞ্জে বড় ধাক্কা দিতে পারে। যার ফলে ভারতের বিভিন্ন জায়গা বড় ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারে। এমনকী তাঁদের আশঙ্কা, দু’মাসের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারত তথা কলকাতায় বড়সড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে।

[আরও পড়ুন:  আলিপুর চিড়িয়াখানায় এবার অ্যানাকোন্ডা চাক্ষুষ করতে পারবেন দর্শকরা!]

খাস কলকাতা তো বটেই। বাদ যাবে না সল্টলেক, বরানগর থেকে শুরু করে দক্ষিণেশ্বর। তার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বড় শহর, এমনকী পড়শি রাজ্যেরও বেশ কিছু ঘনবসতির শহর নগরও এই তালিকায় রয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি মানুষের জীবন এই মুহূর্তে প্রায় খাদের কিনারে। ভয়াল ভূমিকম্পের অতল খাদ। যার গহ্বরে পড়লে আর রক্ষা নেই। সম্প্রতি খড়গপুর আইআইটির জিওলজি বিভাগের ভূতত্ত্ববিদরা এই করাল আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা, ভূমিকম্পের অন্যতম উৎসস্থল যে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান কার্যত লাগোয়া। সাকুল্যে সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে। উত্তর-পূর্ব ভারতের ভূকম্প-উৎস থেকেও পশ্চিমবঙ্গের দূরত্ব এমন কিছু নয়, মাত্র সাড়ে ছ’শো কিলোমিটার। আর তীব্র ভূকম্পের আঁতুড় যে হিমালয় অঞ্চল, তার মোটে সাতশো কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে এই রাজ্য। ফলে যে কোনও একটিতে কম্পন হলে পশ্চিমবঙ্গে কম-বেশি প্রভাব পড়ার বিলক্ষণ সম্ভাবনা। 

খড়গপুর আইআইটি’র জিওলজি ও জিওফিজিক্সের প্রধান তথা বিশিষ্ট ভূ-পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক শঙ্করকুমার নাথ জানিয়েছেন, রবিবারের ভূমিকম্প হয়েছে দক্ষিণ পুরুলিয়া সিওয়ার জোনে। এ দিন পুরুলিয়া থেকে ১০ কিলোমিটার নীচে এই কম্পনের কেন্দ্র ছিল। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৪.১। তবে বারবার এই ভূমিকম্পের ফলে একটা বিষয়ই ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। তা হল, গত চার দিনে ঘটা ভূমিকম্পের উৎস। দেখা গিয়েছে, প্রতি ক্ষেত্রেই যে অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছে, ভূ-ত্বক থেকে ১০ কিলোমিটার নীচে রয়েছে তার এপিসেন্টারগুলো। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, জম্মু-কাশ্মীর, অরুণাচলপ্রদেশ এবং অসম, সব জায়গাতেই পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার নিচে পৃথিবীর প্লেটগুলো খুব অল্প সময়ে পরপর কয়েকবার নড়াচড়া করে ফেলেছে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে অনেকটা নিচে হওয়ায় তার তীব্রতা কম হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মৃদু কম্পনের মধ্যেই বড়সড় ভূমিকম্পের বীজ লুকিয়ে আছে বলে মনে করছেন ভূতত্ত্ববিদরা। “সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের যা ট্রেন্ড, তাতে আগামী দু’মাসের মধ্যেই উত্তরপূর্ব ভারতে বড়সড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা। যার প্রভাব পড়বে কলকাতাতেও” -অনুমান আবহাওয়াবিদ সুজীব করের। এ প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা ইন্ডিয়ান প্লেট ক্রমশ ইউরেশীয় প্লেটের তলায় ঢুকছে। যার ফলে হিমালয় পার্বত্য এলাকা ভূকম্পপ্রবণ। সেই সঙ্গে ভূকম্পের আশঙ্কা রয়েছে খাস কলকাতাতেও। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতার ভূপৃষ্ঠের সাড়ে চার কিলোমিটার নীচ দিয়ে একটি চ্যুতি রয়েছে, যার নাম ‘ময়মনসিংহ-কলকাতা হিঞ্জ’ বা ‘ইওসিন হিঞ্জ’। সেখানে যা শক্তি সঞ্চিত রয়েছে, তা থেকে যে কোনও দিন রিখটার স্কেলে ৬.৮ মাত্রার ভূকম্প হতে পারে। প্রসঙ্গত, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায় ভূমিকম্পের এপিসেন্টার থেকে ২০০-২২৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ইয়াসিন প্লেট।

কিন্তু কলকাতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা অন্য জায়গায়। কোথায়?

ভূবিজ্ঞানীদের কথায়, কলকাতার বিপদ আরও বাড়াচ্ছে মাটির নিচে থাকা পলির স্তর। শঙ্করবাবুর মতে, “ভূগর্ভের কম্পন পলিমাটির ভিতর দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে উপরের দিকে উঠবে। পলিমাটির ভিতরে যত বেশি পাক খাবে, উপরের স্তরে কম্পনের মাত্রা তত বাড়বে।” কলকাতায় ভূমিকম্প হলে কোন কোন এলাকা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তা জানতে আইআইটি-র ভূতত্ত্ববিদদের দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছিল ভূবিজ্ঞান মন্ত্রক। তার রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, শহরের একটা বড় অংশ বিপদ-বলয়ের মধ্যেই রয়েছে। তবে ভূকম্পে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকা। এ শহরের মাটি কেঁপে উঠলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কলকাতা জাদুুঘর, বিড়লা তারামণ্ডল শ্যামবাজারের নেতাজি মূর্তিও অক্ষত থাকবে না বলেই আশঙ্কা ভূবিজ্ঞানীদের।

[আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্রের সঙ্গে প্রতারণা’, বনগাঁ পুরসভার অনাস্থা মামলায় ফের প্রশাসনকে ভর্ৎসনা বিচারপতির]

ভূতত্ত্ববিদদের মতে, রাজারহাট-নিউ টাউনে এলাকায় জলাভূমি ভরাট করে গড়ে উঠেছে বহুতল। ফলে সেখানে ভূস্তরে কম্পন হলে জল উঠে এসে মাটিকে নরম করে দেবে। কাদামাটি নরম হয়ে গিয়ে বহুতলের ভিত আলগা করে দেবে। তার ফলেই বাড়িগুলি ভেঙে পড়ার প্রভূত আশঙ্কা। মাটি জোরে কেঁপে উঠলে মধ্য এবং উত্তর কলকাতার পুরনো বাড়িগুলিতেও বিপর্যয় ঘটতে পারে। শঙ্করবাবুর দাওয়াই, এখন সমস্ত বাড়ি  বানানো দরকার এমন প্রযুক্তিতে, যা ভূকম্পের আঘাত সইতে সক্ষম। একতলা হোক বা একশোতলা, সব বাড়ি সিসমিক রেট্রোফট মাইক্রোজোনিং কোডের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে। জরাজীর্ণ সমস্ত বাড়ি অবিলম্বে ভেঙে ফেলতে হবে।       

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement