সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাত্র আড়াই বছরের এক ফুটফুটে শিশুকন্যা ঐত্রী দে। ক’দিন আগেও মা-বাবার সঙ্গে হাসত, খেলত। বুধবার মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতাল থেকে সেই মেয়েরই নিথর দেহ যখন কামালগাজির বাড়িতে এল, তখন বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন মা শম্পা দে। আমরি কর্তৃপক্ষর বিরুদ্ধে ভুল ইনজেকশন প্রয়োগে মেয়ের মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন বাবা জয়ন্ত দে। বৃহস্পতিবার সকাল দশটা নাগাদ কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান দু’জনে। এক ঘণ্টারও কিছুটা বেশি সময় মৃত শিশুর পরিবারের সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ছিলেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে মৃতের বাবা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আমার মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনেছেন। যথাযথ তদন্ত হবে বলে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন আমরা ন্যায্য বিচার পাব।’
পুলিশের পাশাপাশি স্বাস্থ্য কমিশনেও মেয়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে অভিযোগ করেছেন মৃতার বাবা। আমরির মুকুন্দপুর শাখার ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়ের নামেও এফআইআরে হয়েছে। শিশু মারা যাওয়ার পর মৃতের পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। আমরি হাসপাতালের আধিকারিক জয়ন্তী বলেছিলেন, ‘আমার চেয়ে বড় মস্তান এখানে কেউ নেই।’ এই ঔদ্ধত্য ও অমানবিকতায় হতবাক মৃতের পরিবার। পূর্ব যাদবপুর থানায় চিকিৎসায় গাফিলতিতে শিশুর মৃত্যু ও জয়ন্তীর বিরুদ্ধে হুমকি-সহ কয়েকটি ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায়। এদিন সকালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর মৃতের বাবা বলেন, আমরির আধিকারিকের দুর্ব্যবহারে আমরা অবাক হয়েছি। ওঁর নামে আলাদা করে অভিযোগ করব।
বুধবার আড়াই বছরের শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয় মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতাল। ক্ষোভের পরিবেশে হাসপাতালের আধিকারিক জয়ন্তীর দুর্ব্যবহার নিয়েও ব্যপক চর্চা চলছে রাজ্যে। কী করে এক সন্তানহারা মা’কে কেউ বলতে পারেন, ‘আমার থেকে বড় মস্তান কেউ নেই’? পরিবারের বক্তব্য, সন্তানহারা মায়ের প্রতি বিন্দুমাত্র সমবেদনা দেখাননি জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে পূর্ব যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে মৃত শিশুর পরিবার। জয়ন্তীর গ্রেপ্তারির দাবিতে সরব হয়েছেন অনেকেই। আমরির তরফে জানানো হয়, এই ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছুটিতে পাঠানো হয়েছে ওই উদ্ধত অফিসারকে। আমরির তরফে পালটা এফআইআর করা হয়েছে মৃতের পরিবারের বিরুদ্ধে। শিশুর আত্মীয়দের বক্তব্য, আমরা শান্ত ছিলাম। যে হাসপাতাল এমন ব্যবহার করে তাদের গাফিলতি প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ তদন্তে নেমেছে। মৃত শিশুর হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি ‘হিস্টো প্যাথলজিক্যাল টেস্ট’-এ পাঠানো হবে। এই পরীক্ষা হলে ঐত্রী বেঁচে থাকা অবস্থায় তার আদৌ হৃদযন্ত্রে কোনও সমস্যা ছিল কি না তা জানা যাবে।
বুধবার ভোরে ঐত্রী দে নামে আড়াই বছরের শিশুটির মৃত্যু হয় মুকুন্দপুর আমরিতে। গত রবিবার রাতে জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাচ্চাটিকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়। বুধবার ভোরে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেওয়া হয়। পরিবারের দাবি, তারপরই মেয়ের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। শুরু হয় খিঁচুনি। শ্বাসকষ্ট বাড়লে অক্সিজেন দেওয়ার দরকার পড়ে। কিন্তু, ‘মাস্ক’ খুঁজে না পাওয়ায় তা সময়মতো দেওয়া যায়নি। ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হার্ট ফেল করে শিশুটির মৃত্যু হয়। সন্তান হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঐত্রীর বাবা জয়ন্ত দে ও মা শম্পা দে। ঐত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ভুল ইনজেকশন দেওয়াতেই এই মৃত্যু। যদিও হাসপাতালের তরফে গাফিলতির কথা অস্বীকার করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ঠিক কী ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখার পরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিভাগীয় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত জয়ন্তীকে ছুটিতে পাঠিয়ে তারই প্রথম পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে হাসপাতালের তরফে মৃত শিশুর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.