সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফেসবুকে ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে সহকর্মীর স্বামীর সঙ্গে পরকীয়া। প্রেমালাপ জারি রাখতে ছাত্রীর ফোন নম্বরকে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। স্বামীর ভার্চুয়াল প্রেমালাপ স্ত্রীর কাছে ফাঁস হয়ে গেলে যেন বিপদে না পড়তে হয়। সেজন্য আগেভাগেই ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিলেন অভিযুক্ত শিক্ষিকা। তাই স্বামীর ফেসবুক ঘেঁটে ফোন নম্বর বের করে ছাত্রীকেই একহাত নেন অভিযোগকারিণী। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে শহরের এক নামী স্কুলে।
স্কুলের দিদিমণির লুকিয়ে প্রেম। কানে আসলেই কেমন এক নিষিদ্ধ বিষয়ে হাতছানির ইঙ্গিত মেলে। তবে অকথা কুকথা শুনব না, বলে কানে হাত চাপা দিয়ে লাভ নেই। এমন ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়েছে জোড়াবাগান থানা এলাকার এক স্কুলে। প্রকাশ্যে এসেছে অভিযুক্ত শিক্ষিকার নাম। তিনি শ্রীমন্তী চট্টোপাধ্যায়। সহকর্মী কাকলি হালদার বরাটের স্বামীর সঙ্গে ভার্চুয়াল প্রেমালাপের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে যে সে প্রেম নয়, একেবারে ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রেমালাপ শুরু। অন্যদিকে, এহেন প্রেমালাপের বিন্দুবিসর্গও জানতে পারেনি নবম শ্রেণির ছাত্রী। তবে না জেনেই বিপদে পড়ল সে। এখন ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে ফোন নম্বরের একটা দরকার পড়েই। অভিযুক্ত শিক্ষিকা সেই ফোন নম্বরের জন্যই ওই ছাত্রীর দ্বারস্থ হন। অভিযোগ, ছাত্রীকে না জানিয়েই তার ফোন নম্বর ত্রিপর্ণা চক্রবর্তী নামের ফেক ফেসবুক অ্যাকাউন্টের অ্যাবাউটসে আপলোড করে দেন। একদিন ওই পড়ুয়ার মোবাইলে একটি ওটিপি আসে। ওটিপি যে আসবে তা ভালমতোই জানতেন শ্রীমন্তী চট্টোপাধ্যায়। তাই নির্দিষ্ট দিনে ছাত্রীর কাছ ওটিপি জেনেও নেন তিনি।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বামীর অতিরিক্ত ইনভলভমেন্ট নিয়ে ততদিনে বেশ বিরক্ত কাকলিদেবী। রাতবিরেতে স্বামী ফোন নিয়ে পড়ে থাকেন। গৃহযুদ্ধ অবধারিত, এমন পরিস্থিতিতে ফোনটি হাতে পেয়ে ওই শিক্ষিকা দেখেন। স্বামী ত্রিপর্ণা চক্রবর্তী নামের এক মহিলার সঙ্গে ভার্চুয়াল প্রেমে লিপ্ত। সেই মহিলাই তাঁর স্বামীকে নানারকম উত্তেজনামূলক ছবি পাঠিয়েছেন ইনবক্সে। সঙ্গে প্রভাবিত করার বার্তালাপ। বিরক্ত শিক্ষিকা প্রোফাইল হোল্ডারের ঠিকানা জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অ্যাবাউটসে গিয়ে পেয়ে যান ফোন নম্বর। স্বামী আসার আগেই নম্বরটি সরিয়ে ফেলেন। মোবাইলে থাকা ট্রু-কলারে ফোন নম্বর রাখতেই মালিকের নাম ভেসে ওঠে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নম্বরটি স্কুলের এক ছাত্রীর। পরের দিন স্কুলে গিয়েই সেই ছাত্রীকে ডেকে পাঠিয়ে তিরস্কার করেন। এদিকে শিক্ষিকার স্বামীর সঙ্গে প্রেমের ‘অপবাদ’ পেয়ে প্রথমটায় হকচকিয়ে যায় ওই পড়ুয়া। পরে আক্রমণ সামলে সে শ্রীমন্তী চট্টোপাধ্যায়ের নাম করে। জানায়, বেশ কিছুদিন আগে শ্রীমন্তী ম্যাডাম তার মোবাইলে আসা ওটিপি জানতে চেয়েছিলেন। এরপরেই ভার্চুয়াল প্রেমালাপের বিষয়টি দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁর কাছে। তিনি সঙ্গেসঙ্গেই অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে পাকড়াও করেন। নানারকম প্রশ্নবাণে জর্জরিত করলেও শ্রীমন্তী চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ মানতে চাননি। উলটে ওই ছাত্রীর দিকে আঙুল তোলেন। এবার বাধ্য হয়েই প্রধান শিক্ষিকাকে বিষয়টি জানান শিক্ষিকা কাকলি হালদার বরাট। বলা বাহুল্য, সহকর্মীর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ কানে তোলেননি প্রধান শিক্ষিকা। উলটে কাকলিদেবীর স্বামীকে দোষারোপ করেন। পালটা বলেন, ত্রিপর্ণা নামের কোনও মহিলার সঙ্গে ভার্চুয়াল প্রেম করছেন তাঁর স্বামী। শ্রীমন্তী এর ভিতরে নেই।
অভিযোগ, এরপরেই ওই ছাত্রীকে হুমকি দিতে থাকেন শ্রীমন্তী চট্টোপাধ্যায়। নাম ভাঁড়িয়ে প্রেমের অভিযোগকে অস্বীকার করেন। এমনকী ছাত্রীকে ইংরেজিতে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকাই শুধু নন, তালিকায় ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাও। জোড়া হুমকিতে ভীত ছাত্রী গোটা বিষয়টি অভিভাবকদের জানায়। মেয়েকে দুই শিক্ষিকার কলহ থেকে উদ্ধার করতে আসরে নামেন বাবা-মা। অভিযোগ, সহযোগিতার বদলে ছাত্রীর অভিভাবকদেরও হুমকি দেন প্রধান শিক্ষিকা। ওই পড়ুয়াকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। নবম শ্রেণির ছাত্রী এহেন বিপদে পাশে দাঁড়ান শিক্ষিকা কাকলি হালদার বরাট। তিনি শ্রীমন্তী চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জোড়াবাগান থানা ও লালবাজারের সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ দায়ের করেন। বলা বাহুল্য, প্রেম ইতি পড়েনি। লাজলজ্জা ভুলে ওই ছাত্রীকেই দোষী প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগেন শিক্ষিকা শ্রীমন্তী চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন প্রধান শিক্ষিকা। কাকলিদেবী অন্য শিক্ষিকাদের সঙ্গে জোট বেঁধে ওই ছাত্রীর পাশে দাঁড়াতেই বিপত্তি ঘটে। বাধ্য হয়েই সংবাদমাধ্যমের কাছে সহকর্মীর প্রেমালাপের কেচ্ছা ফাঁস করে দেন কাকলিদেবী। বিষয়টি চাউর হয়ে যায়। প্রকাশ্যে এলেও বিতর্কিত প্রেম নিয়ে মুখ খোলেননি অভিযুক্ত শিক্ষিকা। এই ঘটনায় স্কুলটিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.