নব্যেন্দু হাজরা: কারও মাথা যেন ব্যাঙের ছাতা। কারও মাথায় পাখির বাসা। কোথাও বিলকুল নেড়া মাথায় একফালি দ্বীপের মতো চুলের গোছা। কারও মস্তকে আবার দুনিয়া কাঁপানো খেলোয়াড় থেকে রুপোলি পর্দার স্বপ্নের নায়ক – রোনাল্ডো, মেসি, বিরাট কোহলি কিংবা সলমন, শাহরুখ, বরুণ ধাওয়ানের ছাঁট। কেশবিন্যাসের এমন হরেক কারিকুরি কোনও পার্টি বা অভিনয়ের মঞ্চে নয়। কচিকাঁচারা যেখানে শিক্ষা ও শৃঙ্খলার পাঠ নিতে যায়, সেই স্কুলের ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের চুলে এইসব অভিনব কাটিং দেখে শিক্ষকরা আঁতকে উঠছেন। কুরুচিকর হেয়ার স্টইলের হাত ধরে শিক্ষাঙ্গনে অপসংস্কৃতির বেনোজল হুড়মুড়িয়ে ঢুকছে বলে অভিযোগ উঠছে। এনিয়ে যারপরনাই শঙ্কিত শিক্ষকমহল।
বহু শাসনেও কাজ না হওয়ায় নিউটাউনের হাটগাছা হরিদাস বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ভিন্নতর উপায় ভেবেছেন। পড়ুয়াদের চুলের ফ্যাশনে দাঁড়ি টানতে এবার ক্ষৌরকারদের দ্বারস্থ হয়েছে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষকের সই করা নোটিস ঝোলানো হয়েছে সেলুনে। তাতে বলা হয়েছে, দৃষ্টিকটু কোনও চুলের কাট যেন স্কুলের ছাত্রদের কেটে না দেওয়া হয়। কেউ কাটতে চাইলে, তাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। প্রয়োজনে অভিভাবক বা স্কুলের নজরে বিষয়টি আনতে হবে। আজকের প্রজন্মের পড়ুয়াদের মধ্যে রুচিবোধ ফিরিয়ে আনতে স্কুলের এই অভিনব উদ্যোগ আলোড়ন ফেলেছে সর্বত্র। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডঃ পার্থসারথি দাস বলেন, “নানা রকম চুলের কাটিং করে স্কুলে আসাটা খুবই দৃষ্টিকটু। এটা একজনকে দেখে পাঁচজন শেখে। তাই আমরা সেলুনের কর্মীদের কাছে আবেদন করেছি, দৃষ্টিকটু কোনও চুলের কাট স্কুলের ছাত্রদের কেটে দেবেন না।”
খয়েরি, সবুজ, লাল রং ভিড়ছে মাথায়। ক্লাসে ঢুকে ছাত্রদের মাথার চেহারা দেখে ভিরমি খাচ্ছেন শিক্ষকরা। একাধিকবার ছাত্র এবং অভিভাবকদের বারণ করা সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি। বাহারি চুলের কারণে নিত্য শাস্তির মুখে পড়েছে ছাত্ররা। কিন্তু তাতেও বদলায়নি পরিস্থিতি। উলটে পড়শোনার ক্ষতি হয়েছে। তাই এবার ছাত্রদের ‘মাথা’ ঠিক রাখতে এলাকার একাধিক সেলুনের দ্বারস্থ স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রায় সবকটি সেলুনেই পাঠানো হয়েছে নোটিস।
নিউটাউনে অ্যাকোয়াটিকার কাছে ১৯৬২ সালে তৈরি হওয়া স্কুল হাটগাছা হরিদাস বিদ্যাপীঠ। উচ্চমাধ্যমিক স্কুলটিতে প্রায় ২৯০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। ঐতিহ্যবাহী স্কুলে সম্প্রতি ছাত্রদের চুলের ছাঁট নিয়ে তৈরি হয়েছে নয়া সমস্যা। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, এর ফলে স্কুলের সুনামও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আগে একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা এই ধরনের চুল কাটাত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, চতুর্থ, পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়ারাও সব বাহারি কায়দায় চুল কাটছে। শিক্ষকরা বারণ করলেও শুনছে না। অভিভাবকদের ডেকে পাঠিয়েও লাভ হয়নি। তাই সেলুনে গিয়েই এই আবেদন করেছেন স্কুলের শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষক সমস্যার কথা জানিয়ে সেলুনের কর্মীদের কাছে অনুরোধ করেছেন, দৃষ্টিকটু চুলের কাটিং না করতে। এলাকার পাঁচটি সেলুনে তা পাঠানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের এই ভূমিকায় খুশি অভিভাবকরাও। এর ফলে ছোটদের চুলের কাটিং নিয়ে সমস্যা মিটবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
ঝামেলা করে ছেলে, ভরসা করে প্রতিবেশীর কাছে গয়না রেখে খোয়ালেন প্রৌঢ়া
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নানা বিষয়ে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিং করায়। চুলের কাটিং নিয়ে তাদের বোঝানো সত্বেও কাজ না হওয়ায় শিক্ষা দেওয়ার উপায় হিসেবে এই পথ বেছে নিয়েছেন। এর আগে একবার স্কুল থেকে খুব সাইকেল চুরি যাচ্ছিল। কোনওরকম নজরদারি দিয়েই আটকানো যাচ্ছিল না। তখন স্কুলের তরফে স্থানীয় সাইকেলের দোকানগুলিকে সতর্ক করে। বলা হয়, কেউ সাইকেল এনে লক ভাঙতে চাইলে আগে যেন তা স্কুলকে জানানো হয়। এভাবে বেশ কিছু সইকেল চোর ধরাও পড়ে। বন্ধ হয় সাইকেল চুরি। এবারও তাই এই অভিনব কায়দায় ছাত্রদের মধ্যে রুচিবোধ ফিরিয়ে আনতে চাইছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.