ছবি: প্রতীকী
দীপঙ্কর মণ্ডল: প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল পাঠ্যক্রম ফের বদলের কাজে হাত দিল রাজ্য সরকার। নতুন শিক্ষানীতি গড়ার প্রথম ধাপ হিসাবে শুরু হল এই কাজ। আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাককে মাথায় রেখে দশ সদস্যের কমিটি গড়েছে শিক্ষা দপ্তর। এই কমিটি কেন্দ্রের সমান্তরাল নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করবে।উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর হবে বৈঠক।
প্রথম থেকে অষ্টম পর্যন্ত প্রায় ৬০টি বই গায়ত্রীদেবীকে কুরিয়র সার্ভিসের মাধ্যমে তাঁর নিউ ইয়র্কের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। উচ্চ প্রাথমিক পর্যন্ত শিশুপাঠ্যের অপ্রয়োজনীয় অংশ বিয়োজন বা নতুন কিছু সংযোজনের সুপারিশ করবেন তিনি। প্রায় এগারো বছর আগে স্কুল পড়ুয়াদের পাঠ্যক্রম বদলে হাত দিয়েছিল রাজ্য সরকার। গড়া হয়েছিল স্কুলশিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটি। ধাপে ধাপে বদলেছে সিলেবাস। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফের পাঠ্যক্রম সংস্কার দরকার বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
সম্প্রতি গড়া নয়া কমিটি এ বিষয়ে একমত। কেন্দ্রের বিকল্প শিক্ষানীতি কমিটির সদস্য উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “২৭ এপ্রিল উচ্চমাধ্যমিক শেষ হলে আমরা বৈঠকে বসব। অনেকে বিদেশে আছেন। বৈঠক হবে ভারচুয়াল। ইতিমধ্যে প্রথম থেকে অষ্টমের সমস্ত বই অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাককে পাঠানো হয়েছে।”
উল্লেখ্য, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সারস্বত চর্চায় উজ্জ্বলতম নাম এই গায়ত্রী। ‘ক্যান দ্য সাবঅল্টার্ন স্পিক?’ লিখে যিনি গোটা বিশ্বে সুলেখক হিসাবে পরিচিত হন। মৌলিক এই প্রশ্নটি এখন প্রবাদপ্রতিম, ‘নিম্নবর্গের কি কোনও ভাষা আছে?’ অধ্যাপনা ও গবেষণার পাশাপাশি গায়ত্রী প্রচুর অনুবাদ সাহিত্যও রচনা করেছেন। তাঁর হাতে রাজ্যের শিক্ষানীতি তৈরির মূল দায়িত্ব তুলে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
দশ বছরের মধ্যে কেন ফের সিলেবাস বদলের দরকার হল? কমিটির অন্য এক সদস্য জানিয়েছেন, “কোভিড পরবর্তী সময়ে গোটা বিশ্বেই শিশুদের জন্য নতুন সিলেবাস তৈরি হচ্ছে। আমাদের এখানে শিশুপাঠ্যের ভার কিছুটা লাঘব করা দরকার। কিছু রাজ্যে কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি চালু হয়ে গিয়েছে। বিকল্প শিক্ষানীতি তৈরিতে সিলেবাস সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
রাজ্যের বিকল্প শিক্ষানীতিতে কোনও আপত্তি নেই বলে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রক। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান কলকাতায় এসে বলে গিয়েছেন, “কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে কোনও রাজ্য যদি কিছু যোগ করতে চায় তা সাংবিধানিক অধিকার। তাতে কোনও আপত্তি নেই।” রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথায়, “কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির মধ্যে ভালগুলো আমরা গ্রহণ করব।”
বিকল্প শিক্ষানীতিতে কর্মসংস্থানকে বেশি গুরুত্ব দিতে চায় নতুন কমিটি। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়ানোয় নজর দেবেন কমিটির সদস্যরা। রাজ্যের শিক্ষাবিদদের একটি অংশের আশঙ্কা, কেন্দ্রীয় নীতি কার্যকর হলে শিক্ষায় বেসরকারীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ হবে। ড. কস্তুরীরঙ্গন-সহ শিক্ষাবিদরা জাতীয় শিক্ষানীতি তৈরি করেছেন। তারপরও কেন বিরোধিতা হচ্ছে সে প্রশ্ন তুলেছিলেন ধর্মেন্দ্র। উত্তরে ব্রাত্য বলেন, “আমরাও বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষাবিদদের নিয়ে কমিটি গড়েছি। এঁদের সুপারিশও কেন্দ্রের মানা উচিত।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.