অভিরূপ দাস: আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে চিরাচরিত কায়দাতেই আইজীবী বলে উঠলেন, ‘আই অবজেক্ট ইয়োর অনার।’ তাঁর আপত্তিতে সম্মতি জানিয়ে বিচারপতিও বললেন, ‘অবজেকশন সাসটেইনড’। কিন্তু, কালো পোশাক পরা আইনজীবীকে দেখে যেন খানিকটা থমকে গেলেন তিনি। একরাশ কোঁকড়ানো চুলের সায়ন্তন এখন মেঘ। আলিপুর আদালতের রূপান্তরিত আইনজীবী।
[বাবার কবিতা চুরির প্রতিবাদ, মেয়ের ছবি ছড়াল পর্ন সাইটে]
চলনে-বলনে সম্পূর্ণ নারী। ২০১২ সালে ল’কলেজ থেকে আইন পাস করে আলিপুর কোর্টে যোগ দেন। কিন্তু কাজ করতে পারছিলেন না। অন্যান্য আইনজীবীরা অনেকেই নবীন এই আইনজীবীর দিকে বাঁকা চোখে তাকাতেন। সেদিনের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে মেঘ বলেন, ‘যে কালো কোটটা পরে গর্ব হওয়ার কথা। তা পরেই চোখ ভিজে যেত। উড়ে আসা মন্তব্যগুলো নেওয়া যাচ্ছিল না।‘ রুপান্তরিত এই আইনজীবীর সংযোজন, ‘রূপান্তরকামী বিষয়টি নিয়ে এখনও সমাজে ছুঁৎমার্গের অন্ত নেই। বন্ধ ঘরে অনেকে খোলামেলা আলোচনা করলেও রূপান্তরিত সহকর্মী দেখলে নাক সিঁটকান অনেকেই। কাজ করতে গিয়ে তা ঠারেঠোরে বুঝতে পারি।’ সহকর্মীরা তফাত রেখে মিশতেন। কেমন লাগত? ‘স্কুল জীবনের লড়াইয়ের পর ওটা ছিল আমার দ্বিতীয় লড়াই।’ আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ে মেঘের গলায়।
[স্বর্ণকমল সাহার বাড়িতে চুরির কিনারা করল পুলিশ, বমাল গ্রেপ্তার চোর]
স্কুলের খাতায় নাম ছিল সায়ন্তন। কিন্তু, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বুঝতে পেরেছিলেন, ছেলে হয়ে জন্মালেও আর সেই পরিচয় থাকা যাবে না। এখন নারী পরিচয়ে আলিপুরে কোর্টে চুটিয়ে প্র্যাকটিস করছেন তিনি। মেঘ জানিয়েছেন, ‘আমার বয়স তখন ষোল-এর কোঠায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লিপস্টিক পরতাম। লুকিয়ে মেয়েদের সাজপোশাকও গায়ে দিতাম।‘ বলাই বাহুল্য, ছেলের এমন আচরণ, সহজে মেনে নিতে পারেননি বাড়ির লোকেরা। কিন্তু, মেঘ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, নিজের শর্তের বাঁচবেন। লড়াইটা একেবারেই সহজ ছিল না। মানসিকভাবে নারী হলেও, শরীরটা যে তখনও পুরুষের। জটিল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করতে হয়েছে। তার ঝক্কিও যে বড় কম নয়! আইনজীবী মেঘ বলেন, ‘আলিপুরে যখন প্রথম কাজ শুরু করি তখনও পুরোপুরি নারীর শরীর আসেনি। একটা ট্রান্সফরমেশন হচ্ছিল। কড়া ওষুধ খেতে হত।‘ আলিপুর আদালতের সিনিয়র ল’ইয়ার দেবব্রত চক্রবর্তীকে অবশ্য পাশে পেয়েছেন মেঘ।
[২৭ মার্চ শুরু উচ্চমাধ্যমিক, টোকাটুকি রুখতে কড়া সংসদ]
এই শারীরিক ও মানসিক টানাপোড়েন চলার সময় আচমকাই একটি ডিভোর্সের কেস পান মেঘ। ‘আমার এক বান্ধবী অনেকদিন ধরে ডিভোর্স চাইছিল। আচমকাই আমার কাছে এসে বলল, আমার কেসটা লড়বি?’ দ্বিতীয়বার ভাবেননি এই ব্যতিক্রমী আইনজীবী। আলিপুর ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে বিচারক বি সামন্তর এজলাশে চলছিল শুনানি। মেঘ জানিয়েছেন, ‘শুনানি চলাকালীন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী আমাকে নিয়ে মশকরা করতে ছাড়েননি।’ কিন্তু, লক্ষ্য স্থির রেখে বাজিমাত করেন তিনি। আলিপুর আদালতের এই আইনজীবী মেঘকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রূপান্তরিত অধ্যাপক মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়।
[পোল্ট্রি ফার্মে চটজলদি মুরগিকে তাগড়াই বানাতে কী ব্যবহার হয় জানেন?]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.