শুভময় মণ্ডল: দুর্গাপুজোর মরশুম শুরু হতে আর বেশিদিন নেই। কিন্তু তার আগে শহরের এক পুজো কমিটির ভোলবদল ইতিমধ্যেই শিরোনামে। মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার পুজোয় কমিটির সভাপতি বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু হতেই শোরগোল পড়েছে শহরের পুজোমহলে। গতবছরও কালীঘাট সংঘশ্রী ক্লাবের পুজোর উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পুজো কমিটির উপদেষ্টাও মমতার ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ আচমকা পুজো কমিটির একাংশকে অন্ধকারে রেখে নাকি এবছর সভাপতি করা হয়েছে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুকে। এবং এই বিষয়ে রীতিমতো সংঘাতের বাতাবরণ পুজো কমিটির মধ্যেই। বর্তমানে যিনি ক্লাবের সভাপতি, সেই শিবশংকর চট্টোপাধ্যায় নাকি জানেনই না যে সায়ন্তন বসুকে পুজোকমিটির সভাপতি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটাতে তিনি কমিটির কাছে জবাবদিহি চাইবেন বলে জানিয়েছেন। আজ, শনিবার সন্ধেয় কমিটির বৈঠকও ডেকেছেন তিনি। সেখানেই নাকি বিষয়টি নিয়ে হেস্তনেস্ত করবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন ধরেই শহরের হেভিওয়েট পুজোগুলিতে ভোলবদলের খবর শিরোনামে। রাতারাতি তৃণমূল ঘনিষ্ঠ থেকে বিজেপি ঘেঁষা হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি পুজোকমিটি। যা নিয়ে বেশ শোরগোল পড়েছে। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে শহরের একাধিক পুজোকমিটিকে নোটিস পাঠায় আয়কর দপ্তর। যার ফলেই নাকি আচমকা বেশ কিছু পুজোকমিটির এমন রাতারাতি ভোলবদল বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। সেই কারণেই নাকি কালীঘাটের সংঘশ্রীর এবারের সভাপতি সায়ন্তন বসু। সূত্রের খবর, আয়কর দপ্তর থেকে চাপ দিয়েই পুজো কমিটিগুলিতে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে কেন্দ্রের শাসকদল। যাতে নড়েচড়ে বসেছে এ রাজ্যের শাসকদল। সংঘশ্রীর সভাপতি শিবশংকরবাবু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তাঁকে না জানিয়ে পুজোকমিটি কীভাবে কাউকে সভাপতি করতে পারে। কমিটির সহ-সম্পাদক সৌরদীপ দাস বলেছেন, এবছর বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু পুজোকমিটির সভাপতি হয়েছেন। এবছর বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ পুজোর উদ্বোধন করবেন।
এই নিয়েই পুজোকমিটির মধ্যে বেধেছে দ্বন্দ্ব। পুজোর উপদেষ্টা কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আজ, শনিবার কমিটির বৈঠকেই ফয়সালা হবে সভাপতি কে। শিবশংকর চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে ক্লাবের সভাপতি। পুজো কমিটির সভাপতি করতে হলে কমিটির বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আচমকা কমিটির একাংশকে অন্ধকারে রেখে রাতারাতি অন্য কাউকে সভাপতি করা যায় না। এদিকে, সভাপতি দ্বন্দ্ব নিয়ে যিনি আলোচনায় সেই সায়ন্তন বসুর বক্তব্য, ‘সংঘশ্রীর পুজোকমিটিই আমার কাছে সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব রাখে। কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসাবে নয়, একজন হিন্দু বাঙালি হিসাবে পুজোর সভাপতিত্ব করতে চাই। এতে অসুবিধার কিছু দেখছি না। বারোয়ারি দু্র্গাপুজো কারও একার পৈতৃক সম্পত্তি নয়।’ কমিটির একজন সদস্য দেবাশিস সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ‘সংবাদমাধ্যমে যা বেরিয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হইনি। এভাবে পুজোকে কলুষিত করা হচ্ছে।’ সবমিলিয়ে বলা যায়, বৈঠকে পুজোর সভাপতি দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি আদৌ হয় কিনা সেইদিকেই এখন চোখ তৃণমূল ও বিজেপির।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.