ফাইল ছবি।
অর্ণব আইচ: আর জি করে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় ‘ট্যাগ’ করা হয়েছে সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলকে। তাই গ্রেপ্তারির ৬০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর চার্জশিট না দিলেও জামিন পেলেন না ওই দুই অভিযুক্ত। শিয়ালদহ এসিজেএম আদালতে তাঁদের জামিন খারিজ হল। অভিযুক্তদের আইনজীবীদের উচ্চ আদালতে গিয়ে জামিনের আবেদনের পরামর্শ দিল আদালত। এদিকে, সিবিআইয়ের দাবি, নতুন পাঁচটি ডিভিআর ও পাঁচটি হার্ড ডিস্ক কেন্দ্রীয় ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। সেগুলির উপর ভিত্তি করে তদন্তের প্রয়োজন।
আর জি করে মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তথ্য ও প্রমাণ লোপাট, ষড়যন্ত্রের অভিযোগে হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার ভারচুয়াল পদ্ধতিতে সন্দীপ ও অভিজিৎকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন করেন তাঁদের আইনজীবীরা। জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে তাঁদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার আবেদন জানান সিবিআইয়ের আইনজীবী দীপক পোরিয়া। দুপক্ষের বক্তব্য শোনার পর তাঁদের ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। এ ছাড়াও এদিন আর জি কর হাসপাতালে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ ও অন্য চার অভিযুক্তকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত।
এদিন আর জি করের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় তথ্য এবং প্রমাণ, ষড়যন্ত্রের মামলায় শিয়ালদহ আদালতের বিচারক বলেন, ‘‘যদি তথ্য ও প্রমাণ লোপাটের জন্য আলাদা কোনও মামলা হত, তাহলে ৬০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার ফলে দুই অভিযুক্ত জামিন পেতেই পারতেন। কিন্তু ধর্ষণ ও খুনের মূল মামলার সঙ্গে তাঁদের ‘ট্যাগ’ করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আগেই নির্দেশনামায় ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশের কপি সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছে। এই মামলায় জামিন নিতে গেলে এডিজের মতো উচ্চ আদালতে যেতে হবে।’’
আদালতে অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের আইনজীবীরা তাঁদের আবেদনে জানান, এখন বাদশাদের জমানা নেই যে, তাঁদের মুখের কথায় কাউকে বন্দি করে রাখা হবে। এখন সব কিছু বিচারব্যবস্থার মাধ্যমেই স্থির হয়। তাই এখানেই বিচার চাওয়া হচ্ছে। ৬৫ দিন হয়ে গিয়েছে, সিবিআই দুই অভিযুক্তর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে পারেনি। শুধু তথ্য ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগের কথা বলেছে। কিন্তু প্রমাণ দেখাতে পারেনি। যেহেতু দুজনের গ্রেপ্তারির পর ৬০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে, তাই তাঁরা জামিন পেতেই পারেন। এই মামলায় নতুন কোনও ধারাও যোগ করা হয়নি। সিবিআই শুধু বলছে, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই শুধু স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট জামিন দিতে বারণ করেনি। আবেদনপত্রে বলা হচ্ছে ‘যদি ষড়যন্ত্র হয়ে থাকে।’ তার মানে, ষড়যন্ত্র হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। শুধু অনুমানের ভিত্তিতে তাঁদের কীভাবে আটকে রাখা যায়? তাঁরা যে ধর্ষণ ও খুনের সঙ্গে যুক্ত নন, আদালতে সিবিআই জানিয়েছে।
সিবিআই আদালতে জানিয়েছে, পাঁচটি ডিভিআর ও পাঁচটি হার্ড ডিস্ক কেন্দ্রীয় ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। তার রিপোর্ট আসার পর জেরার প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টে ৬টি স্ট্যাটাস রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ঘটনার আগে সন্দীপ ও অভিজিতের কোনও যোগাযোগ ছিল কি না, বৃহত্তর ষড়যন্ত্র খুঁজে বের করতে এই তথ্য জানার প্রয়োজন। সিবিআইয়ের কারও উপর ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা আক্রোশ নেই। সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে যখন প্রমাণ মিলেছিল, তখন চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই দুই অভিযুক্তর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্তকারীকে সময় দেওয়া হোক। কেস ডায়েরি দেখলে তদন্ত কতটা এগিয়েছে, তা বোঝা যাবে বলে আদালতে জানিয়েছে সিবিআই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.