সুদীপ রায়চৌধুরী: এমনিতে তিনি রাফ অ্যান্ড টাফ! বরাবর পছন্দ করেন ‘বোল্ড’ সিদ্ধান্ত নিতে। তবে এবার দিলীপ ঘোষ যে ‘ব্যক্তিগত’ সিদ্ধান্তটা নিলেন সেটা যে শুধুই ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলবে তাই নয়, একই সঙ্গে তাঁর এবং গোটা বাংলার রাজনীতিতেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। ষাট পেরোনো দিলীপের বিয়ে (Dilip Ghosh Wedding) করার সিদ্ধান্ত তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের জন্যও ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ।
দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) বঙ্গ রাজনীতির আঙিনায় পদার্পণ হয়েছিল আরএসএসের প্রচারক হিসাবে। সংসার নেই, পিছুটান নেই, ২৪ ঘণ্টার রাজনীতিক এবং সমাজসেবক, সেটাই ছিল দিলীপের রাজনৈতিক ইউএসপি। বিয়ে করলে সেই ইউএসপির অনেকটাই হারাবেন দিলীপ, সেই আশঙ্কা তাঁর দলেও অন্দরেও রয়েছে। বস্তুত দিলীপের বিয়ের খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরে। দলের কেউ কেউ বলছেন, হতে পারে বিয়ে করাটা দিলীপ ঘোষের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু পরিচিত রাজনীতিকদের ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যাই করুন না কেন, ভেবেচিন্তে করতে হয়। শোনা যাচ্ছে, দলের তরফে তাঁকে বারণও করা হয়েছিল। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বাধা দেওয়া হয়েছিল। দলের অনেকেই চাইছিলেন না, দিলীপবাবু এই বয়সে এসে আর সংসারধর্মে প্রবেশ করুন। এতে রাজনৈতিকভাবে তাঁর ক্ষতি হতে পারে, সেই সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছিল। দলের একাংশের যুক্তি ছিল, এই বয়সে এসে বিয়ে করলে দিলীপ নিজের রাজনৈতিক পুঁজি তো হারাবেনই, সেই সঙ্গে নানা কটুক্তি, হাস্যকর মন্তব্য, শ্লেষ এসবও হজম করতে হবে।
তবে দিলীপের বিয়েতে (Dilip Ghosh Wedding) বিজেপির থেকেও বেশি অনিচ্ছা দেখা গিয়েছে সংঘের তরফে। দিলীপ একবার বিধায়ক, একবার সাংসদ এবং দলের রাজ্য সভাপতি হলেও তাঁর মূল পরিচয়, তিনি সংঘের প্রচারক। সেই পরিচয়ই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপত্তির মূল ভিত্তি। আরএসএসের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও সংঘ প্রচারক সংসার করতে পারেন না। দিলীপ বিয়ে করার অর্থ সংঘের প্রচারক পদ তাঁকে ছাড়তে হবে। বস্তুত সংঘের সংস্রব ছাড়তে হবে। সেই বার্তা আরএসএসের তরফে তাঁকে পাঠানোও হয়েছিল। বারবার বোঝানো হয়েছিল, এই সিদ্ধান্ত নিলে শুধু তাঁর নয়, দলেরও ভাবমূর্তিতে আঁচ আসবে। কিন্তু দিলীপ সংঘের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়ের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছেন। ফলে আগামী দিনে তাঁর রাজনৈতিক উত্তরণের পথে সংঘের পূর্ণ সমর্থন থাকবে কিনা, সেটা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়ে গেল।
কিন্তু দিলীপকে নিরস্ত করা যায়নি। তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, মায়ের জন্য তাঁর এই সিদ্ধান্ত। সেটা বদলাবে না। মায়ের জন্যই হোক, আর প্রেমের টানেই হোক, বিয়ে করলে রাজনৈতিকভাবে বেশ ভালোরকম চাপে পড়তে হবে, সেটা দিলীপবাবু নিজেও জানেন। কিন্তু ওই যে, বরাবরই তিনি ‘বোল্ড’ সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করেন। এবারও তেমনটাই করলেন। যদিও দিলীপ সমর্থকদের বক্তব্য, তিনি জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর সংঘের প্রচারক হিসাবে কাজ করেন না। সংঘ আর তাঁর প্রতিপালনের দায়িত্বও নেয় না। ফলে তিনি খাতায়কলমে সংঘের প্রচারক হলেও সেভাবে সক্রিয় নন। ফলে বিয়ে করতে তাঁর বিশেষ বাধা থাকার কথা নয়। তাছাড়া সংঘের প্রচারক পদ ছেড়ে বিয়ে করাটাও নতুন নয়। এর আগে অরবিন্দ মেননের মতো নেতাও একইভাবে সংসার করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.