সুদীপ রায়চৌধুরী: সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ‘প্রশাসনিক মদতে’ নারকীয় অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন হিন্দু সম্প্রদায়। যার প্রভাব কাঁটাতার পেরিয়ে পড়েছে এপারেও। তারই মধ্যে দশদিনের জন্য বঙ্গ সফরে আসছেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত-সহ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ৯জন শীর্ষ পদাধিকারী। সাম্প্রতিক অতীতে এহেন ‘নবগ্রহ সমাবেশের’ নজির এরাজ্যে নেই বলে অভিমত কেশব ভবনের অন্দরমহলে।
চলতি বছর শতবর্ষে পা রাখছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। সরকারিভাবে সংঘ কর্তারা জানাচ্ছেন, শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশজুড়ে একের পর এক যে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, সেগুলি নিয়ে আলোচনা এবং সাংগঠনিক রুটিন বৈঠক করতেই বাংলায় আসছেন ভাগবত ও অন্য শীর্ষ কর্তারা। জানা যাচ্ছে, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ১০ দিনের বঙ্গ সফরে কলকাতায় থাকবেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত। সঙ্গে আসছেন সংঘের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী সরকার্যবহ দত্তাত্রেয় হোসাবলে-সহ আট শীর্ষ পদাধিকারী। তিনদিন কলকাতায় একাধিক রুদ্ধদ্বার বৈঠক সেরে ১১ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান যাবেন তাঁরা। সেখানে মধ্যবঙ্গের সংঘকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ১৫ তারিখ পর্যন্ত। বৈঠকের মূল আলোচ্যসূচি রাঢ়বঙ্গ, বিশেষত আদিবাসী ও কুড়মি প্রভাবিত এলাকায় সংঘের কর্ম তৎপরতা ও প্রভাববৃদ্ধি। ১৬ তারিখ সফরের শেষদিন বর্ধমানে জনসভা করবেন ভাগবত।
ভাগবত, হোসাবলে ও অন্য শীর্ষ পদাধিকারীদের এই নজিরবিহীন ১০ দিনের বঙ্গ সফর সাড়া ফেলেছে রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মহলে। এই মুহূর্তে প্রতিবেশী বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়ন ও অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মায়ানমারে আরাকান বাহিনীর প্রতাপে সামরিক জুন্টার ক্রমাগত জমি হারানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক জিও-পলিটিক্সে বড়সড় প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি, পূর্ব ভারতে একের পর এক মুসলিম মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনের হদিশ মেলার প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির তৎপরতা দেশের এই অংশে প্রবল। এমন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ঘনঘটার সন্ধিক্ষণে ভাগবত, হোসাবলে-সহ শীর্ষ সংঘ পদাধিকারীদের ১০ দিনের বঙ্গ সফরের কারণ ব্যাখ্যায় ব্যস্ত বিশেষজ্ঞরা।
সরকারিভাবে আরএসএস শিবির এই সফরকে ‘রুটিন সাংগঠনিক সফর’ বলে ব্যাখ্যা করলেও কেশব ভবনের অন্দর মহলে কান পাতলে অন্য গল্প শোনা যাচ্ছে। বঙ্গ আরএসএসের এক প্রবীণ পদাধিকারীর কথায়, “দেশভাগের ক্ষত বাংলায় আজও দগদগে। ইসলামিক শাসন ও মুসলিম মৌলবাদের রমরমাও দেশের কোনও অংশের থেকে কম নয়। অথচ গত দুদশকে উত্তর ও মধ্য ভরতে হিন্দু আত্মমর্যাদার উল্লেখযোগ্য উন্মেষ হলেও বাংলা এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছনে। কেন এই ব্যতিক্রম, সে প্রশ্ন বারবার উঠেছে সংঘের নিজস্ব বৈঠকে।” তিনি জানান, সংঘের শতবর্ষ পূর্তির মুখে এই অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা ১০ দিনের বঙ্গ সফরে আসছেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত, সংঘের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী সরকার্যবহ দত্তাত্রেয় হোসাবলে-সহ আট শীর্ষ পদাধিকারী। সূত্রের খবর, এই সফরে বাংলায় সংঘের প্রসার থমকে থাকা, সংঘ সম্পর্কে মানুষকে এখনও উৎসাহিত করতে না পারা ও স্বয়ংসেবকদের উৎসাহ হারানো নিয়ে অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে কেশব ভবনের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্তদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.