সুব্রত বিশ্বাস: যাত্রী সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় যখন জোর দিচ্ছে রেল, তখনই একের পর এক যাত্রী হেনস্তার ঘটনা ঘটছে। আর এই হেনস্তার অভিযোগ সরাসরি যাত্রীরাই করছেন রেলমন্ত্রীর কাছে। টুইটের এই অভিযোগে তদন্তও চলছে একের পর এক।
হাওড়া স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরায় যাত্রীদের ওঠার লাইনে টাকা দিলেই পাওয়া যায় প্রাধান্য। নৌসেনাকর্মীর এই অভিযোগে রেলমন্ত্রক পূর্ব রেলের আরপিএফকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। আরপিএফ সিসিটিভিতে লাইনের ফুটেজে দেখতে পায় পয়সার বিনিময়ে লাইনের সামনে ঢোকার জন্য যাত্রীদের সুযোগ করে দিচ্ছেন তিন রেল পুলিশের ইন্টেলিজেন্স কর্মী। সৌরভ জানা, সন্দীপ ও অনন্ত নামের তিন আরবিআইকে ফটো দেখে চিহ্নিত করেন তাঁরা। রেল পুলিশের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে এই বেআইনি কাজ করার অভিযোগ এনেছে আরপিএফ। আরপিএফ কর্তারা জানিয়েছেন, রেল পুলিশ সুপারকে সিডি-সহ এই অভিযোগ জানানো হয়েছে।
[প্রশিক্ষণরত সব কর্মপ্রার্থীরাই বসতে পারবেন টেট-এ, ঘোষণা শিক্ষামন্ত্রীর]
হাওড়া রেল পুলিশ সুপার নীলাদ্রি চক্রবর্তী অবশ্য বলেছেন, ফুটেজে এমন তথ্য নেই যাতে আরআইবি কর্মীরাই অভিযুক্ত তা প্রমাণ হয়। হাওড়া আরআইবির ইনচার্জ তিলক মণ্ডল বলেন, আরআইবির ডিউটি সন্দেহজনক যাত্রীদের সামগ্রী তল্লাশি করা। এমন তল্লাশিতেই ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ অভিযোগ এনেছেন বলে তাঁর দাবি। যদিও তাঁর এই দাবি মানতে নারাজ আরপিএফ। তাঁরা জানান, সন্দেহজনক যাত্রীকে ধরে থানায় খরব দিলে সেই পুলিশকর্মীরা আসার পরই যাত্রীর ব্যাগ তল্লাশি করা যেতে পারে। কিন্তু আরআইবি সাধারণ যাত্রীদের ধরে তল্লাশির নামে দপ্তরে নিয়ে গিয়ে হয়রানি ও টাকা পয়সা কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।
লাইন পরিচালনার নামে আরপিএফ ও জিআরপি দুই প্রশাসনের কর্মীরাই যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আগে জায়গা পাওয়ার সুযোগ করে দেন বলে অভিযোগ। আরআইবি কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেও আরপিএফ এ নিয়ে পদক্ষেপ করতে চাইছে না। আরপিএফ কর্তাদের কথায়, লাইন দিয়ে ট্রেন তোলার কোনও আইন নেই রেলে। তবে যাত্রী সুবিধার জন্য এই লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে ২২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের লাইনে দাঁড়িয়েই রেলমন্ত্রীকে টুইটে অভিযোগ করেন নৌসেনাকর্মী হেমেন। তিনি জানান, টাকা নিয়ে আরআইবি কর্মীরা সাধারণ কামরায় যাত্রী তুলছেন। সঙ্গে সঙ্গে রেলমন্ত্রক থেকে ব্যবস্থার জন্য পূর্ব রেলের আরপিএফকে জানানো হয়। তারই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যাত্রীদের চিহ্নিত করেন। অভিযুক্ত আরআইবি কর্মীদেরও সন্ধান পান।
অন্যদিকে যাত্রীর কাছ থেকেই টাকা-পয়সা কেড়ে নিলেন তিন টিকিট পরীক্ষক। হাওড়া ডিভিশনের পাকুড়ে মাঝরাতে এই ঘটনার পরই বি-এড পড়ুয়া বিশ্বজিৎ মণ্ডল রেলমন্ত্রীকে টুইট করে বিষয়টি জানান। রেলমন্ত্রক বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাওড়া ডিআরএমকে। সোমবারই ডিভিশন সূত্রে বিশ্বজিৎ মণ্ডলকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন রবিবার রাতে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে মালদহ আসছিলেন বিশ্বজিৎবাবু। তিনি বাজারসউ-এর বাসিন্দা। মালদহ থেকে লোকাল ধরে ফেরার উদ্দেশ্য থাকলেও তিনি ঘুমিয়ে পড়ায় মালদহ স্টেশনে নামতে পারেননি। পাকুড় স্টেশনে তাঁকে তিন টিকিট পরীক্ষক ধরলে তিনি ঘুমিয়ে পড়ার বিষয়টি জানান। কিন্তু টিকিট পরীক্ষকরা কোনও কথাই শোনেননি। একটা ঘরে ঢুকিয়ে কাছে থাকা ১৬০ টাকা কেড়ে নেন বিশ্বজিৎবাবুর কাছ থেকে। তিনি রিসিট চাইলে টিকিট পরীক্ষকরা বলেন, ৩৫০ টাকা দিলে তবেই রিসিট মিলবে। কিন্তু যাত্রা করার মতো পয়সা না থাকায় জরিমানা সংক্রান্ত কোনও তথ্য তাঁকে না দেওয়ায় তিনি তৎক্ষণাৎ রেলমন্ত্রীকে টুইটের মাধ্যমে বিষয়টি জানান।
[রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া, বন্ধ ফ্ল্যাটে মৃত মায়ের দেহ আগলে ছেলে]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.