সুব্রত বিশ্বাস: করোনাই বদলে দিল চিত্রটা। স্টেশন পরিচ্ছন্ন রাখতে সারাদিন ভবঘুরের তাড়াতে ব্যস্ত থাকতেন আরপিএফ কর্মীরা। এখনও তাঁদের নিয়েই ব্যস্ত। তবে তাড়ানোর জন্য নয়; দু’বেলা খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে। মানবিকতার এক অনন্য নজির তুলে ধরলেন তাঁরা। আরও একবার দেখিয়ে দিলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য।’
সারা বছর ব্যস্ত স্টেশনগুলিতে ভবঘুরেদের নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়তে হয় আরপিএফ কর্মীদের। কখনও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, কখনও নিয়ম ভাঙার কারণে ভবঘুরেদের সঙ্গে নম্র থাকতে পারেন না তাঁরা। কর্তব্যবোধই তাঁদের একাজ করতে কার্যত বাধ্য করে। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। স্টেশন ফাঁকা। অন্য সময় তবু পথ চলতি মানুষ কিছু খেতে দেন ভবঘুরেদের। কিন্তু লকডাউনের পরিস্থিতিতে সেই সুযোগও নেই। ফলে উপোসে দিন কাটছে ভবঘুরেদের। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁদের পাশে দাঁড়াল আরপিএফ। হয়েছে তহবিল গঠন। হাওড়া স্টেশনের আরপিএফ হাবিলদার আর জে ঘোষ, তাঁর এক মাসের পুরো বেতনটাই করোনার ত্রাণে দিয়ে দিয়েছেন। অন্য আরপিএফ কর্মীরাও একদিনের বেতন দিয়েছেন করোনার লড়াইয়ে। প্রাণঘাতী এক ভাইরাসের সঙ্গে অসম লড়াই। তবু এ লড়াই জিততে হবে। এজন্য ১২ ঘণ্টার ডিউটিতে নেই ক্ষোভ।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রেল সম্পত্তি প্রহরার পাশাপাশি গরিব মানুষকে খাওয়াতে ব্যস্ত তাঁরা। ফেয়ারলি প্লেস, হাওড়া, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, নলহাটি, নবদ্বীপ ধাম, শিয়ালদহ, পার্ক সার্কাস, বালিগঞ্জ, বজবজ, কলকাতা, কানাল ব্রিজ, ব্যারাকপুর, রানাঘাট, আসানসোল, দুর্গাপুর, মধুপুর, সিতারামপুর, জসিডি, সিউড়ি, মালদহ, খড়গপুর, ঝাড়গ্রাম, তমলুক… প্রায় সব স্টেশনে একই চিত্র। আরপিএফ কর্মীরা ভবঘুরেদের খাওয়াতে ব্যস্ত। এই উদ্যোগে আইআরসিটিসি এবং বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনকেও পাশে পেয়েছেন তাঁরা। শিয়ালদহের আরপিএফের সিনিয়র কমান্ড্যান্ট এ ইব্রাহিম শরিফ জানান, “এক অসম লড়াই চলছে। লকডাউনে সাধারণ মানুষের রোজগার নেই। হাজার হাজার মানুষ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। সবাইকে নিয়ে বাঁচতে হবে। স্টেশন ফাঁকা। সেখানে ১২ ঘন্টা করে প্রহরা দিচ্ছেন আরপিএফ কর্মীরা। শিয়ালদহের ২০১টি স্টেশন প্রহরার সঙ্গে গরিব মানুষের খাওয়াতে ব্যস্ত ১ হাজার ৭৫০ জন আরপিএফ কর্মী। এ চিত্র সারা দেশের। লড়াইটা বাঁচার জন্য। এজন্য আমরা সবাই এক। সে হোক। দরিদ্র মানুষ বাঁচাতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.