গৌতম ব্রহ্ম: ‘ডা. ইন্দ্রনীল সেন, আরএমও কাম ক্লিনিক্যাল টিউটর, সিএনএমসি’। ডেথ সার্টিফিকেটের তলায় জ্বলজ্বল করছে স্ট্যাম্প। উপরে স্বাক্ষর। কিন্তু, শ্মশানে নিয়ে মৃতদেহ দাহ করতে পারলেন না পরিজনেরা। তাঁদের ফিরিয়ে দিল কেওড়াতলা শ্মশান কর্তৃপক্ষ। শ্মশান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কম্পিউটারে টাইপ করা ডেথ সার্টিফিকেট তারা গ্রাহ্য করবে না। হাতে লেখা শংসাপত্র চাই। পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে মারা যান ওই ব্যক্তি। অভিযোগ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ডিজিটাল ডেথ সার্টিফিকেট গ্রহণ করেনি কেওড়াতলা শ্মশান কর্তৃপক্ষ। এমনকী, খোদ সুপার পীতবরণ চক্রবর্তীর অনুরোধেও কাজ হয়নি। চরম ভোগান্তির শিকার হন মৃতের পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত মৃতদেহ নিয়ে ঠায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাঁদের। শেষপর্যন্ত কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের হস্তক্ষেপে জট কাটে। প্রায় ছ’ঘন্টা পর মৃতদেহ দাহ করেন পরিবারের লোকেরা। কেওড়াতলা শ্মশানের রেজিস্ট্রারের শাস্তির দাবি তুলেছেন তাঁরা।
[সমর-খোকনের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক, চাকরির আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর]
মৃতের নাম শুকদেব অধিকারী। বাড়ি মেটিয়াবুরুজের গার্ডেনরিচের রামদাসহাটিতে। ৪ এপ্রিল আশঙ্কাজনক অবস্থায় শুকদেববাবুকে ভর্তি করা হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা নাগাদ মারা যান ষাটোর্ধ্ব ওই ব্যক্তি। জানা গিয়েছে, মাস চারেক আগে ই-ডিসচার্জ ও ই-ডেথ সার্টিফিকেট প্রকল্প চালু হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। হাতে লেখা ডেথ সাটির্ফিকেট দেওয়ার রেওয়াজে ইতি টেনেছে এই সরকারি হাসপাতাল। শুকদেব অধিকারীর মৃত্যুর পরও, তাঁর পরিবারকে টাইপ করা ডিজিটাল ডেথ সার্টিফিকেট দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর সেই ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে মৃতদেহ দাহ করতে গিয়ে চরমে ভোগান্তিতে পড়লেন মৃতের পরিবারের লোকেরা। শেষপর্যন্ত, কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের হস্তক্ষেপে বৃহস্পতিবার বিকেলে জট খোলে। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মৃত শুকদেব অধিকারীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা সত্ত্বেও কেন মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়া হল? রাগে ফুঁসছেন মৃতের পরিবার। শুকদেববাবুর দাদা বনমালী অধিকারী জানালেন, ‘ছ’- ঘণ্টা মরদেহ আগলে লাইনে বসে আছেন বাড়ির লোকজন। ওই রেজিস্ট্রারের শাস্তি হওয়া উচিত।’
[মরা মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার ‘ফর্মুলা’ জেনে ফেলেছিলেন বেহালার শুভব্রত]
ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারই আবার ই-ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল ন্যাশনাল মেডিক্যালে। কর্মশালা চলাকালীনই ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে গন্ডগোলের খবর আসে। কর্মশালায় হাসপাতালে নার্স ও ওয়ার্ড মাস্টারদের জানিয়ে দেওয়া হয়, যতই বাধা আসুক ডিসচার্জ সার্টিফিকেট এবং ডেথ সার্টিফিকেট আর হাতে লেখা যাবে না। সবই হবে ডিজিটাল। দু’টি ক্ষেত্রেই রোগীর চিহ্নিতকরণে একটি ‘পিএ’ নম্বর থাকবে। ওই নম্বর রেকর্ড সেকশনের সফটওয়্যারে টাইপ করলেই রোগীর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানা যাবে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সুপার পীতবরণ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ডিজিটাল ডেথ সার্টিফিকেট ও ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রকল্পটি সফল করতে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। প্রতিটি বিভাগে আলাদা করে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে। কম্পিউটারে আপলোড করা হয়েছে বিশেষ সফটওয়্যারও। কিন্তু, শ্মশানের রেজিস্টাররাই যদি এমন আচরণ করেন, তাহলে তো বিপদ। পীতবরণবাবুর প্রশ্ন, ‘‘ন্যাশনালে পাইলট প্রোজেক্ট শুরু হয়েছে। ছ’মাস পর সব হাসপাতালকে এই ফরম্যাটে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করতে হবে। তখন কী হবে?”
[মেট্রোর স্মার্ট কার্ডে থাকবে বাংলা, বাঙালির আন্দোলনে স্বীকৃতি রেল মন্ত্রকের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.