সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রেম-পুজোর ফুলেও ‘ছ্যাঁকা’! ভ্যালেন্টাইনস ডে-র আগেই গোলাপের চাহিদা তুঙ্গে। দামও আকাশছোঁয়া।
সত্যি প্রেমের কী মহিমা! বুধবার থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এক-একটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়! বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি তা আরও বাড়ার আশঙ্কা।
কিন্তু উদ্দাম-প্রেমের কাছে টাকা যে নগণ্য তার প্রমাণ মিলেছে এদিন থেকেই। পছন্দের সঙ্গী-সঙ্গিনীকে ভালবাসার প্রতীক (লাল গোলাপ) উপহার দেওয়ার জন্য বুধবার সকাল থেকেই ফুলের দোকানে ভিড় জমিয়েছেন প্রেমিক-প্রেমিকারা। পাছে ওইদিন হাতছাড়া হয়ে যায়। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক জানান, দিন কয়েক আগেও যে গোলাপ এক টাকায় বিকোতো, রাতারাতি তার দাম হয়ে গিয়েছে ১০ টাকা! তাঁর কথায়, পাইকারি বাজারে এমনি সময় ১০০টি গোলাপের দাম থাকে ১০০ টাকা। কিন্তু গত দু’দিন ১০০টি গোলাপের দাম ছুঁয়েছে হাজার টাকা। আর খুচরো ব্যবসায়ীরা যে যার নিজের মতো দাম নির্ধারণ করে ক্রেতাদের কাছে বিকোচ্ছেন। অর্থাৎ এক টাকার গোলাপের বর্তমান বাজার দর ৩০ টাকা! বিপুল চাহিদার জন্যই গোলাপের বাজার আকাশছোঁয়া বলেই দাবি ফুল ব্যবসায়ীদের। তাঁদের কথায়, সরস্বতী পুজোর দিন থেকেই এবার গোলাপের বিপুল চাহিদা। দাম বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকে তাই আগেই ফুল কিনে রেখেছেন। গোলপার্কের ফুল ব্যবসায়ী সমীরণ মাইতি বলেন, “আমরা গোলাপের প্যাকেজিং ওভাবেই করছি, যাতে এক-দু’দিন আগে কিনলেও তা শুকিয়ে না যায়।” এক্ষেত্রে শীতের আমেজ থাকাটাও বাড়তি মাইলেজ দিচ্ছে বলে দাবি নিউ মার্কেটের ফুল ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদের। তিনি বলেন, শীতের সময় এমনিই ফুল টাটকা থাকে। প্রেমিক-প্রেমিকাদের উদ্দেশে তাঁর টিপস, দাম কম আর স্টক থাকতে থাকতে আগেভাগে ফুল কিনে দিন। শীত এখনও বজায় থাকায় আগেভাগে গোলাপ কিনে বাড়িতে জলের মধ্যে দিলেও তা টাটকা থাকবে বলে জানান তিনি।
তবে শুধু গোলাপের বিনিময়ে তো প্রেমের দিন কাটবে না। সারা দিন কাটানোর ব্লু-প্রিন্ট বহুদিন আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছেন শহর ও শহরতলির প্রেমিক যুগল। মাল্টিপ্লেক্সে মর্নিং শো। দুপুরে নামী রেস্তরাঁয় বিশেষ বাফে লাঞ্চ। বিকেলে ফুরফুরে হাওয়ায় গঙ্গায় নৌকা বিহার। সন্ধ্যায় একান্তে-নিভৃতে।
প্রেম দিবসে পছন্দের সঙ্গীকে শুধু মনের কথা জানানোই নয়, রক্ষণশীলতা কাটিয়ে বাঙালি-প্রেম এখন অনেক সাবালক। অনলাইনেই রীতিমতো ‘ওয়াইল্ড ডেট’-এর প্ল্যান মাসখানেক আগেই করে নিয়েছে বাঙালি তরুণ-তরুণী। আসলে উপহার, মন দেওয়া-নেওয়ার পাশাপাশি বেপরোয়া, বেহিসেবি হয়েছে আদর-সোহাগও। বাঙালির কাছে একসময় প্রেম দিবসের সংজ্ঞা ছিল বসন্ত-পঞ্চমীর দিন হলুদ শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে অঞ্জলি দেওয়া। কিন্তু আই প্যাড, ইন্টারনেটের যুগে বাঙালি এখন টেক্কা দিচ্ছে ‘ফরাসি প্রেমিক’-কেও। দুরু-দুরু বুকে প্রেম নিবেদন, বইয়ের ফাঁকে চ্যাপ্টা গোলাপ, প্রেমিকার বন্ধুর মাধ্যমে প্রেমপত্র পাঠানো – প্রেমের ক্ষেত্রে বাঙালির এই ‘খুব চেনা’ বিষয়গুলি ক্রমশ ঢুকে পড়েছে স্মৃতিতে। সেই জায়গা নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ, হাইক-এর মতো মেসেজ পাঠানোর সাইটগুলি। ইন্টারনেটের যুগে প্রেমও যে এখন গ্লোবাল। প্রেমের বিশ্বায়নের এই সময় বাজার ধরতে সেজে উঠছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের শপিং মল। বাতাসে ভ্যালেন্টাইনের গন্ধে সেজেছে কল্লোলিনীও। হৃদয়ের আকারের লাল বেলুনে সেজে উঠেছে রেস্তরাঁগুলি। আসলে নববর্ষ, দুর্গাপুজোর মতো প্রেম-উৎসবেও ঢুকে পড়েছে কর্পোরেট হাওয়া। তরুণ-তরুণীর আবেগকে কাজে লাগিয়ে মোবাইল ফোন থেকে গহনা, এমনকী কফি শপেও চলছে নানা স্কিম। অনলাইন সাইটগুলি হয়ে উঠেছে প্রেমময়। কোথাও ৭০ শতাংশ, কোথাও বা ৫০ শতাংশ ছাড়ের হাতছানি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.