সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যেতে পারতেন যে কোনও দিন, যে কোনও দিকে। কিন্তু কেন যাবেন? জীবনের এই অমোঘ প্রশ্ন অমীমাংসিত রেখে যিনি চলে গিয়েছেন আলোকবর্ষের পথে, তিলোত্তমার পথ তাঁকেই আঁকড়ে ধরছে। বলা হচ্ছে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কথা। তাঁর নামে রাস্তা পেতে চলেছে কলকাতা। পুরসভার রাস্তা নামকরণ কমিটি সূত্রে খবর, ৩৩ নং ওয়ার্ডের রামমোহন মল্লিক গার্ডেন লেনের নতুন নাম হবে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের নামে। এতে অনুরাগী মহলের খুশির মাঝে কবিপত্নীর চাপা অভিমানও নজর এড়ায়নি।
নীললোহিতকে নিয়ে কলকাতাবাসী আজও মগ্ন। তাঁর সৃষ্টি আজও তরুণ সাহিত্যপ্রেমী মহলে বহুল চর্চিত বিষয়। কলমে অতিরিক্ত ধার নিয়ে তাঁরই সহযোদ্ধা বেপরোয়া কবি শক্তিও কি ততটাই চর্চিত? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিতর্ক অবশ্যম্ভাবী। সে বিতর্কে গিয়ে কাজ নেই। তবে কলকাতার বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্স যেন অবিচ্ছেদ্য হয়ে উঠেছিল। সেই নস্টালজিয়াকে গুরুত্ব দিয়ে দিন কয়েক আগেই ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্সের নাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে করার প্রস্তাব পাশ হয়েছে। আনুষ্ঠানিক বদল সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
সুনীলের পর এবার শক্তির পালা। কলকাতা পুরসভার রোড রিনেমিং কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান আরেক কবি – জয় গোস্বামী। সুনীল, শক্তিদের অনুজপ্রতিম। তিনিই শহরের বিভিন্ন পথঘাটের নামের সঙ্গে গুরুত্ব অনুসারে কবি-সাহিত্যিকদের নাম জুড়ে দিচ্ছেন বলে অনেকেরই ধারণা। তা সত্যি হোক বা না হোক, পুরসভার এই কমিটির ধারাবাহিক কাজে সাহিত্য অনুরাগীরা বেশ খুশি, তা বলাই বাহুল্য। তবে শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে পুরসভার এই সিদ্ধান্তে খুব উচ্ছ্বসিত হতে পারছেন না কবি পত্নী মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘শক্তির মৃত্যুর পর অনুরাগীদের অনেকেই চেয়েছিলেন, ওঁর নামে একটি রাস্তা হোক। তাঁরা উদ্যোগও নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। ২৫ বছর পর এখন কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে ওঁর নামে একটি রাস্তার নামকরণ হচ্ছে। আরও আগে হলে ভাল হতো।’
তাঁর এই অভিমান স্বাভাবিক। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ২৫ বছরে সাহিত্য মহলে আয়োজন ঢের। বছরভর নানা জায়গায় কবি স্মরণে অনুষ্ঠান। কিন্তু ‘মধ্যরাতে ফুটপাথ বদল’-এর নায়ক কেনই বা পথের মাঝে এতদিন ছিলেন না, সেই প্রশ্নই হয়ত কুরে কুরে খাচ্ছে মীনাক্ষীদেবীকে। তবু তিলোত্তমার পথে শক্তি হারায়নি, যেভাবে শক্তি হারাননি স্বকীয় গতি, ছন্দ, কাব্যময়তা। আজও তো প্রেমের পেলবতা ভেঙে প্রেমিকের বেপরোয়া উচ্চারণে ফিরে ফিরে আসেন সীমাহীন স্পর্ধার শক্তি। সেভাবেই ফিরে আসছে পথ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.