Advertisement
Advertisement

যাঁরা বলছেন আবেশ খারাপ, তাঁরা এই প্রজন্মকে চেনেন?

যাঁরা আমাদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করেন, আসুন না একবার আমাদের বাড়িতে!

Rimjhim Dasgupta's Exclusive Write Up About Her Dead Son Abesh
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 14, 2016 9:26 am
  • Updated:August 5, 2019 4:28 pm  

রিমঝিম দাশগুপ্ত: আমার ছেলে কোত্থাও যায়নি৷ আমি ওকে আগলে রেখেছি৷
abesh1_webছোটবেলায় আবেশকে মহাভারতের গল্প পড়ে শোনাতাম৷ মনে আছে অভিমন্যুর কথা শুনে ও চোখ বড় বড় করে তাকাত৷ আজ সেই রংচটা বইটা দেখি৷ মনে হয়, আমার অভিমন্যু আবেশও যেন এক সন্ধ্যায় চক্রব্যূহে ঢুকে পড়েছিল৷ বেরনোর রাস্তা তার জানা ছিল না৷ নয়তো…৷ আমি মনে মনে বলি, বাবু চিন্তা কোরো না, আমিও আছি চক্রব্যূহে তোমার পাশে৷ তোমাকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না আমার থেকে৷
একুশটা দিন হয়ে গেল৷ কত মানুষ এসেছেন৷ আসছেন৷ কত বন্ধু৷ কাউকে ডাকিনি৷ নিজে থেকেই সকলে এসেছেন৷ বলছেন, আমরা পাশে আছি৷ স্বাগতর বন্ধুরা, আমার বন্ধুরা– সকলেই বাবুকে খুব ভালবাসত৷ ও ছোট থেকেই সকলের খুব আদরের৷
একটা ব্যাপার খুব অবাক লাগে৷ সেদিন যারা সানি পার্কের ওই অনুষ্ঠানে ছিল, একবারও তো কেউ এল না আবেশের শ্রা‌দ্ধে৷ আবেশের বাবা মারা যাওয়ার পর ওর বন্ধু ঋষভ মাকে নিয়ে এসেছিল আমাদের বাড়িতে৷ আর আজ যখন নিজের বন্ধু চলে গেল, একবারও এল না৷ কেন? কোনও ভয়ে? হয়তো আমার চোখের দিকে তাকাতে পারত না৷ কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যারা সেদিন ওই পার্টিতে ছিল, প্রতিটা দিন তারা বিবেক দংশনে ভুগবে৷ এরা না কি বন্ধু! আমার তো যা হারানোর হারিয়ে গিয়েছে৷ বেঁচে থাকার একমাত্র উৎস আমার আবেশ চলে যাওয়ার পরে আপাতত আমি দিন গুনছি বিচারের৷ আমার বিশ্বাসই হয় না তিন ফুটের পাঁচিল টপকাতে গিয়ে আমার পাঁচ ফুট ন’ ইঞ্চির ছেলে পড়ে গিয়েছে৷
আমার মা খুব ভালবেসে আমার নাম রেখেছিল রিমঝিম৷ বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে মিল রেখে৷ এখন বৃষ্টির সময়৷ কিন্তু যাকে সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা স্পর্শ করতাম, সে-ই তো চলে গেল৷ তেইশে জুলাইয়ের পর একটা রাতও আমি ঘুমোতে পারিনি৷ মনে হয়েছে এই বুঝি কেউ ‘মাম্মি’ বলে ডেকে উঠল৷ পিৎজা খাওয়ার বায়না করল৷ তেইশে জুলাই মাকে যখন ফোন করে বলি, মা আবেশ আর নেই, মা বিশ্বাসই করতে পারেনি৷ আমিই কি পেরেছিলাম? অনেক কষ্ট নিয়ে এই লেখাটা লিখলাম৷ লেখালেখি তো আমার পেশা নয়৷ রাতে ঘুম হয় না বলে এখন ডায়েরি লিখি৷ অনেকেই আমাদের পরিবার নিয়ে বিভিন্ন কথা বলছেন৷ ভাবছেন আমরা ছেলেকে কেমন মানুষ করেছি! সতেরো বছরের ছেলে মদ খেতে চলে গেল! আমরা কিন্তু খুব উচ্চবিত্ত নই৷ বাঙালি পরিবারের সংস্কৃতি, মর্যাদা আমরা মেনে চলি৷ যাঁরা আমাদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করেন, আসুন না একবার আমাদের বাড়িতে৷ এই প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়েই বন্ধুদের সঙ্গে সিগারেট খায়৷ দুর্গাপুজোয় ড্রিঙ্ক করে৷ তাই বলে কি তারা খারাপ? যাঁরা এগুলো মানতে চান না, আমি বলব তাঁরা এখনও এই প্রজন্মের সঙ্গে মিশতে পারেননি৷ সময় অনেক বদলেছে৷ আবেশের বয়সে আমার হাতে স্মার্টফোন ছিল না৷ চারপাশে এত মাল্টিপ্লেক্স, শপিং মল ছিল না৷
যুগ বদলাচ্ছে৷ আমার ছেলেও আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতোই৷ ছিল৷ ওর খুব বেশি বন্ধু ছিল না৷ হইচই করত না৷ ওর বাবা মারা যাওয়ার পরে আরও চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল৷ দিদার সঙ্গে মাঝেমধ্যে কোথাও বেরোত৷ কখনও একা একা বেরোলে আমাদের জিজ্ঞেস করেই যেত৷ বয়ঃসন্ধির এই সময়টায় সব মা-বাবাই তো একটু ভয়ে থাকে৷ আমরাও থাকতাম৷ সবাই বলে আমার শহরের পুলিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো৷ আমি মনে করি একদিন তারা নিশ্চয়ই সত্যিটা বের করবে৷

অনুলিখন: অভিরূপ দাস

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement