স্টাফ রিপোর্টার: সেমিনার রুমের ছিটকিনি ভাঙা। যে কোনও সময় চিকিৎসক বা ইন্টার্নরা চলে আসতে পারেন ভিতরে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রায় আধঘণ্টা ধরে তরুণী চিকিৎসকের উপর অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় নারকীয় নির্যাতন চালাল, তা নিয়ে প্রশ্ন সিবিআইয়ের। সেই ক্ষেত্রে সেমিনার হলের বাইরে কেউ পাহারা দিচ্ছিল বা নজর রাখছিল কি না, সেই তথ্য জানতে একঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছে সিবিআই। সেমিনার হলে পৌঁছনোর সময় তার গলায় ছিল ব্লু টুথ ইয়ারফোন। তখন সে কারও সঙ্গে কথা বলছিল কি না, তা-ও সিবিআই খতিয়ে দেখছে।
তদন্তে সিবিআই জানতে পারে যে, ঘটনাস্থল তথা আর জি কর হাসপাতালের (RG Kar Hospital) সেমিনার হলের ভিতরের ছিটকিনি ভাঙা ছিল। তাই রাতে যে চিকিৎসকরা হলের কাঠের স্টেজের উপর বিশ্রাম নিতেন, তাঁরা কেউ ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করতে পারতেন না। ওই নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকও পারেননি। সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, ধৃত অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় দাবি করে যে, সে ভিতরে ঢুকে লক বা ছিটকিনি বন্ধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তা ভাঙা থাকায় সে আর বন্ধ করতে পারেনি।
সঞ্জয়ের দাবি, সে প্রচণ্ড মদ্যপান করেছিল। তার তখন বোঝার মতো অবস্থা ছিল না যে, ছিটকানি বন্ধ না থাকলে বাইরে থেকে কেউ আসতে পারে। উল্লেখ্য, রাত দুটো ও তিনটে নাগাদ দুই চিকিৎসক সেমিনার হলে ঢোকেন। তাঁদের মধ্যে একজন ওই নির্যাতিতার সঙ্গে কথাও বলে এক রোগীর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ নেন। এর পরও অন্য এক ডাক্তারি ছাত্র রাত তিনটে নাগাদ এক সিনিয়র চিকিৎসককে খুঁজতে সেমিনার হলে যান। তাঁর দাবি, তিনি নির্যাতিতাকে ঘুমাতে দেখেছিলেন।
সেমিনার হলের কাছেই প্যাসেজে রয়েছে সিসিটিভির ক্যামেরা। ওই প্যাসেজের কাছে রয়েছে বাথরুমও। সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে সিবিআই দেখেছে যে, ভোর চারটের মিনিট তিনেক আগে সঞ্জয় রায়কে সেমিনার হলের দিকে যেতে দেখা যায়। ওই সময়ের পর থেকে সিসিটিভির ফুটেজে অনেককেই প্যাসেজ দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে। তাদের মধে্য বেশিরভাগই রোগীদের আত্মীয় বলে পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। আবার কয়েকজন নার্সকেও সেখানে যাতায়াত করতে দেখা যায়। তদন্তের শুরুতে পুলিশও ওই ব্যক্তিদের জেরা করে জেনে নেয়, ঘটনার ভোররাতে কে, কী কারণে সেখানে ছিলেন। কিন্তু এর পরও ধন্দে সিবিআই।
সঞ্জয় রায় যখন সেমিনার হলের ভিতরে তরুণীর উপর অত্যাচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ, সেই সময়ই বাইরে থেকে কেউ নজরদারি করছিল কি না, তা জানতে সিবিআইও ফুটেজে থাকা প্রত্যেকের গতিবিধির উপর নজর রাখে। কিন্তু সিবিআই জেনেছে, ওই ফুটেজে বাথরুম না দেখা গেলেও প্যাসেজ দিয়ে বাথরুমে যাতায়াত করা যায়। সেই ক্ষেত্রে বাথরুমের বাইরে থেকে কেউ নজরদারি চালাচ্ছিল, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না সিবিআই আধিকারিকরা। ভোর ৪টে ৩৫ মিনিট নাগাদ সঞ্জয়কে ওই ফুটেজেই বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। তদন্তে এই ফুটেজকেই অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.