সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কর্তব্যরত অবস্থায় রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোড়ন ফেলা এবং আলোচিত ঘটনা। এ নিছক এক নারী নির্যাতনের ঘটনাই, তুলে দিয়েছে হাজারও প্রশ্ন। ঘটনার পরেরদিনই অভিযুক্ত সন্দেহে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তার পর অবশ্য মামলার তদন্তভার যায় কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে। কিন্তু তার পর থেকে আর একজনও গ্রেপ্তার হয়নি। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টা করছে স্বয়ং প্রশাসন। এর জেরে মুখ্যমন্ত্রী-স্বাস্থ্যমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি তুলেছে বাম-বিজেপি। এই পরিস্থিতি সরকারের উপর চাপ বাড়ছে, সরকার বিপাকে পড়েছে – এমন প্রচারও চলছে। এই পরিস্থিতিতে অধ্যাপক সংগঠন WBCUPA-র তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
তাদের বক্তব্য, ”আমাদের মধ্যে অনেকেরই মনে হচ্ছে, এই আর জি কর (RG Kar Hospital) কাণ্ডে রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল বিপাকে পড়েছে। এই ধারণা ছড়ানো হচ্ছে। জনমানসে, মধ্যবিত্তের মাঝে তৃণমূল বিশ্বাস হারিয়েছে। এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে। আমাদের মনে হয়, আমাদের শহরকেন্দ্রিক, সমাজমাধ্যম (Social Media) সর্বস্ব, উনিশ শতকীয় ভুয়ো ভাঁওতা রেনেসাঁ বিশ্বাসী মনের প্রতিফলন এটি। আমাদের ব্যক্তিগত ধারণার ফসল। মাটি বিচ্যুত সম্পূর্ণ ভারচুয়াল একটি ভাবনা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের মৃত্যু (বীভৎস, নারকীয় ঘটনা ও মৃত্যু) নিয়ে কাঙালপনা আর হাহাকার! যারা সবাই অলস জীবনে, দেরিদার ভাষায় ইভেন্ট খুঁজি বেড়ায় তাদের বেহায়াপনা। গালভরা কথায় resonate করেছে, তাই রাস্তায় এইসব বলেন। আসলে এটাকে মনস্তত্ত্বের ভাষায় ফ্যাড(fad) বলে।”
ওয়েবকুপার দাবি, বাস্তব অন্য কথা বলছে। গ্রাম বাংলার চিত্র ভিন্ন। এখন চাষের মরশুম। বর্ষার সময়। সবার মুখে ভাত ও সবজি তুলে দেওয়ার কাজে তাঁরা ব্যস্ত। এ বিষয়ে বিবৃতিতে সংগঠনের সদস্যরা বলছেন, ”বিনিময়ে তাঁদের রুজি হয় হয়তো। কিন্তু জীবনদায়ী বস্তুর কোনও বিনিময় মূল্য হয় না। যাঁদের শহরে কাজের লোক আছে, মাস মাইনের নিশ্চিত জীবন আছে, এই ভয়ংকরতম মানবতা বিরোধী ঘটনা নিয়ে তাঁরা মিডিয়ার সঙ্গে নিয়ে বিলাসিতা দেখাতে পারেন। মনে মনে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেন, ড্রয়িং রুমে নিজেদের হোমে বসে বড় বড় হোম হয়ে উঠছেন। আসলে ওটা অবদমিত যৌনতা এবং পাশবিক আনন্দ।”
এমনকী ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে আর জি করে হামলার ঘটনারও নিন্দায় মুখর ওয়েবকুপা (WBCUPA)। তা নিয়ে তাদের বক্তব্য, ”ঘটনার তিনদিন পরে স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে একটি আড়াল থেকে সংগঠিত মুখোশধারী ‘মাকু’ কিছু স্বতঃস্ফূর্ত মানুষকে ভিড়ে ঠেলে নিজেদের ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছিলেন মধ্যরাতে। তারপর থেকে পুরোটা রাজনৈতিক খেলা। রামেরা ঘাবড়ে আছে বামেরা বুঝি বেশি স্কোর করলো, আবার মাকুরা ভাবছে শূন্যের মহিমা কীর্তন করতে গিয়ে আমরা পিছিয়ে পড়লাম না তো? এর ফলে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার আমদানি হয়েছে, আর যার শিকার প্রতিদিন আমজনতা অফিস যাওয়া কিংবা ফেরা, বিশেষত ফেরার সময় হচ্ছেন, যাঁদের বাসে, ট্রেনে যাতায়াত একটু কান পাতলেই শুনতে পাবেন। এখন এই ফেসবুকীয়, হোয়াটসঅ্যাপি মানুষজন একটু জেগে উঠেছেন, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমাদের বাংলায় যে স্বদেশী আন্দোলনের হুজুগ উঠেছিল, ঠিক ওই একই রকম কায়দায়, মিছিল আয়োজন করছেন। মিছিলে যোগ দিতে হয়, না হলে পিছিয়ে পড়তে হয়, তার ডিপি দিতে হয়, স্ট্যাটাস দিতে হয়, ডিপিতে কখনও প্রতিবাদী আলো মোমবাতি আবার কখনও আলো নিভে গেছে নিস্তেজ অন্ধকার দেখাতে হয়। রাস্তায় না বেরলে ঠিক ঠিক প্রতিবাদী হওয়া যায় না। আপনাকে ভারচুয়াল সমাজে একঘরে করে দেওয়া হবে। তার ভয় আছে। সবই ওই স্বদেশী সময়ের দৃশ্য, ছবি।”
এই ঘটনার পর পর বিরোধীরা রাজ্য সরকারের ‘লক্ষ্ণীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প নিয়ে কটাক্ষ শুরু হয়েছিল। তা নিয়ে শাসকদলের অনেকেই তোপ দেগেছেন। অধ্যাপক সংগঠনের তরফে বলা হচ্ছে, ”গ্রামবাংলার মেয়েরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সঙ্গে আছে। বাজার গরম করে লাভ নেই। জ্বালা আমরা বুঝি, ভোটের সময় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বাড়িয়ে দেব, আর হেরে গিয়ে মাস্টার স্ট্রোকের বিরোধিতা করব। এসব পুরোনো খেলা আর খেলবেন না। মানুষের পাশে যান, মানুষকে বুঝুন সঙ্গে থাকুন, তাতেই রাজনৈতিক স্কোর বাড়বে। খুনির কথা, হতভাগ্য মেয়েটির কথা না বলে কলকাতা (Kolkata) তথা বাংলাকে হারিয়ে দেওয়ার, বদনাম করার চক্রান্ত ধরা পড়ে গিয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচে। চক্রান্ত করে সেই ব্যবস্থাকে অচল করলে গ্রাম শহরের সাধারণ মানুষ আপনাদের ছাড়বে না। এই ফেকু আন্দোলনের বিসর্জনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। শুধু কয়েকটা দিনের অপেক্ষা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.