ফাইল ছবি।
অর্ণব আইচ: আর জি কর হাসপাতালে ‘স্কিল ল্যাব’ তৈরিতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ এলেও সন্দীপ ঘোষের নির্দেশে কোনও তদন্ত হয়নি। অথচ এই ব্যাপারে প্রায় তিন কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের। সিবিআই আধিকারিকদের অভিযোগ, এই দুর্নীতির মূল মদতদাতা ছিলেন আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। এই দুর্নীতির টাকার একটি অংশ গিয়েছে তাঁর পকেটে। সেখানে কোনও অভিযোগ হলেও যে তদন্ত চেপে দেওয়া হবে, সেটিই স্বাভাবিক বলেই অভিযোগ সিবিআইয়ের। এই অভিযোগ হাতে পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই রাজ্য সরকার চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের জন্য ‘স্কিল ল্যাব’ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। এমবিবিএস ও স্নাতকোত্তর ডাক্তারি পড়ুয়াদের জন্য এই ‘স্কিল ল্যাব’ অত্যন্ত কার্যকর বলে জানানো হয়। তার জন্য আর জি করের পক্ষ থেকে দরপত্র ডাকা হয়। নিয়ম অনুযায়ী আর জি কর কর্তৃপক্ষ কাজের বরাত পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত আরোপ করে। সেই অনুযায়ী দেখা যায়, মা তারা ট্রেডার্স নামে সংস্থাটিই বরাত পেয়েছে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, ওই সংস্থার আসল মালিক বিপ্লব সিংহ, যিনি সন্দীপ ঘোষের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। বিপ্লব সিংহ ২ কোটি ৯৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকার দরপত্র দেন। আর জি কর হাসপাতালে দুর্নীতির মামলায় সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে সঙ্গে ভেন্ডার বিপ্লব সিংহকেও সিবিআই গ্রেপ্তার করে। বিপ্লবের বাড়িতেও সিবিআই তল্লাশি চালায়। এই দুর্নীতির ব্যাপারে ইতিমধ্যেই সিবিআই সন্দীপ ঘোষ ও বিপ্লব সিংহকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করেছে বলে খবর।
সিবিআই জানিয়েছে, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে একটি বেসরকারি সংস্থা আর জি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়ে জানায় যে, একাধিক সংস্থা দরপত্র দিলেও আর জি কর কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষ সংস্থাকেই বরাত দিয়েছে। তৎকালীন অধ্যক্ষ হিসাবে সন্দীপ ঘোষের হাতেই এই অভিযোগপত্রটি আসে। অন্যান্য বিভাগে এই অভিযোগ যায়। সন্দীপ ঘোষকে এই ব্যাপারে তদন্ত করতে বলা হয়। কিন্তু নিজের ক্ষমতাবলে সন্দীপ কোনও তদন্তের নির্দেশ দেননি। অভিযোগ, প্রযুক্তিগতভাবে বিশেষজ্ঞ, এমন সংস্থাকেই ‘স্কিল ল্যাব’ তৈরির জন্য দরপত্র দেওয়াই দস্তুর। এর জন্য হাসপাতালে টেকনিক্যাল কমিটি তৈরি করা হয়। অথচ শেষ পর্যন্ত মা তারা ট্রেডার্স নামে বিপ্লব সিংহের সংস্থাটিকেই দরপত্র দেওয়া হয়।
এই সংস্থাটির কর্ণধাররা প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও সন্দীপ ঘোষের মদতে এই সংস্থাটি বরাত পায়। তার দরপত্র ছিল ২ কোটি ৯৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। অথচ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের সরকারি হাসপাতালে ৬১ লাখ ৪৭ হাজার ২৯৪ টাকা দরপত্র দিয়ে ‘স্কিল ল্যাব’ তৈরি করা হয়। সেখানে আর জি করে চার গুণ টাকা দিয়ে কেন একটি সংস্থা বরাত পেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.